শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভেনামি চিংড়িতে অভাবনীয় সাফল্য

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ভেনামি চিংড়িতে অভাবনীয় সাফল্য

এক সময় সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি বাগদা ও গলদা চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেন রপ্তানিকারকরা। সেখানে এখন জায়গা করে নিয়েছে  তুলনামূলক কম দামের হাইব্রিড জাতের ভেনামি চিংড়ি।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশে এত দিন ভেনামি চিংড়ির চাষ নিষিদ্ধ ছিল। ভেনামির মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ও প্রতিকূল পরিবেশে চাষ পদ্ধতি নিয়েও দ্বিধাবিভক্তি ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত মৎস্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে খুলনার বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও কয়রায় পরীক্ষামূলক ভেনামির চাষ শুরু হয়েছে। এতে অভাবনীয় সাফল্যও মিলেছে। আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে হেক্টরপ্রতি ভেনামি উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার কেজি। যেখানে সাধারণ পুকুরে বাগদা, গলদার উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৩০০-৪০০ ও আধা নিবিড় পদ্ধতিতে ৪ থেকে ৫ হাজার কেজি। ভেনামি মাত্র ৯০ দিনে বিক্রির উপযোগী হয়। এক বছরে দুই-তিনবার ভেনামি চাষ করা যায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, বাগদার তুলনায় ভেনামির বাজার দর কম। কিন্তু একজন চাষি বছরে দুইবার ভেনামি চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ২২ হাজার কেজি চিংড়ি পাবেন। যা বাগদার বিক্রিমূল্যের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এ ছাড়া বিদেশে বাগদা গলদার পাশাপাশি ভেনামির চাহিদাও রয়েছে। আমাদের কাছে সব ধরনের চিংড়ি থাকলে বিদেশে ক্রেতারা আকৃষ্ট হবেন। কারণ তারা ভিন্ন ভিন্ন দেশের বদলে এক দেশ থেকেই সব ধরনের চিংড়ি কিনতে চান। জানা যায়, খুলনায় ১২টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হলেও গত জুন মাসে চারজন চাষি ভেনামির চাষ শুরু করেন। যারা ৯০ দিনের ব্যবধানে গত সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত ভেনামি বিক্রি করেছেন।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির জানান, বিশ্বের ৭০ ভাগ মার্কেট দখল করে আছে ভেনামি। ২০০৫ সাল থেকে ভেনামি চাষ ও রপ্তানির দাবি জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। কিন্তু হাইব্রিড ভেনামি চাষে বাগদা ও গলদার চাষে ক্ষতি, মড়ক হতে পারে আশঙ্কায় অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে চলতি বছরে এই জাতের চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়। দেখা গেছে, ভেনামি অধিক ঘনত্বে পুকুরে চাষ করা যায়। রোগবালাই সহনশীলতা অন্যান্য চিংড়ির তুলনায় বেশি ও মৃত্যু হার নাই বললে চলে। ভেনামি চিংড়ির ‘গ্রোথ রেট’ অনেক বেশি।

পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষে পরামর্শক, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ খুলনার সাবেক উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, দীর্ঘ খরায় পুকুরের পানিতে অধিক তাপমাত্রা যা ৩৪-৩৫ ডিগ্রি ছিল। ৩২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা হলে ভেনামি চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। তবে প্রতিকূলতা কাটিয়ে ৮৬ দিনে চিংড়ির গড় ওজন হয়েছে ১৯-২০ গ্রাম।

 

সর্বশেষ খবর