বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মাটির সামগ্রী যাচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

মাটির সামগ্রী যাচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে

কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্প। রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

এখানে শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় মাটির গায়ে ফুটে ওঠে লাল গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ নানা রকম নকশা। এমন নান্দনিক কারুকাজের শোপিস থেকে ফুলের গন্ধ না আসলেও পাওয়া যাচ্ছে সমৃদ্ধির সুঘ্রাণ। এ ছাড়া তৈরি হচ্ছে টেরাকোটা। স্থানীয় ভাষায় সেগুলোকে বলে ‘মাটির টাইলস’। এতে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ পান সাত গ্রামের আড়াই শতাধিক মৃৎশিল্পী। স্থানীয় সূত্র মতে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য কয়েক শ বছরের। বিজয়পুর এলাকার সাতটি গ্রামের সাত শতাধিক পাল সম্প্রদায়ের মানুষ মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতেন। বর্তমানে কাজ করছেন তিন শতাধিক পরিবার। গ্রামগুলো হচ্ছে গাংকুল, তেগুরিয়াপাড়া, দক্ষিণ বিজয়পুর, বারপাড়া, দুর্গাপুর, উত্তর বিজয়পুর ও নোয়াপাড়া। সমবায় আন্দোলনের পথিকৃত ড. আখতার হামিদ খান ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল যুবকদের সংগঠন প্রগতি সংঘের ১৫ জন যুবককে নিয়ে গড়ে তোলেন বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। তারা প্রতিজনে ১০ টাকা শেয়ার এবং ৫০ পয়সা আমানত দিয়ে সমিতির কাজ শুরু করেন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ২৫০ জন। এ সমিতির মাধ্যমে মৃৎশিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। হাঁড়ি-পাতিল, বল-বাটি, মগ-জগ থেকে বের হয়ে তারা নান্দনিক সব শোপিস তৈরি শুরু করেন। তারা তৈরি করেন ঘর সাজানোর দ্রব্য, ফুলদানি, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রকার মডেল, মনীষীদের প্রতিকৃতি, ওয়াল প্লেট, জীবজন্তুর মডেল। প্রতিকৃতির মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বঙ্গবন্ধু।

এ ছাড়া দইয়ের পাতিল, দইয়ের কাপ ও চায়ের ভাণ্ডের ভালো চাহিদা রয়েছে। দেশ-বিদেশে কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের চাহিদা বাড়ছে। কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে মৃৎশিল্পীদের। গত অর্থ বছরে এ সমিতির লাভ হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৬০ জনের মতো কর্মচারী হাঁস, ঘোড়া, হাতি, ময়ুর এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি তৈরি করছেন। সমিতির কার্যালয়ের সামনের দিকে রয়েছে শো-রুম। এ সমিতি থেকে কাজ শিখে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। কারখানার প্রবীণ শিল্পী নিমাই চন্দ্র পাল বলেন, তার বাড়ি পাশের গাংকুল গ্রামে। তিনি পারিবারিকভাবে এই পেশায় জড়িত। ৪০ বছর ধরে কাজ করেন। গ্যাস না থাকায় প্রতিষ্ঠানের আয় কমে গেছে। বিশেষ করে বিদেশের চাহিদা কমেছে।

প্রোডাকশন বিভাগের চন্দন পালের বাড়ি দক্ষিণ বিজয়পুর। তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে কাজ করেন। এখানে পুরুষের সঙ্গে ৩০ জনের মতো নারীও কাজ করেন। গ্যাসের চাপ বাড়লে তাদের উৎপাদন বাড়বে। দ্বিগুণ শ্রমিকের কাজের সুযোগ হবে।

 

সর্বশেষ খবর