দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে কোরবানির মতো বন্ধ হয়ে গেল দুর্গাপূজাও। ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কাংলাহাড়িতে। ঘটনার সূত্রপাত তিন বছর আগে। ২০১২ সালে প্রথমবার দুর্গাপুজো করার উদ্যোগী হয় মুসলিম প্রধান এই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এরজন্য পূজা কমিটিও তৈরি হয়। প্রশাসনের কাছে পূজার অনুমতিও চাওয়া হয়। অনুমতি মেলায় প্রতিমা তৈরির কাজও শুরু হয়। কিন্তু আপত্তি জানায় স্থানীয় ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষেরা। কারণ তার আগেই এই গ্রামেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল আদুল আযহার কোরবানি। মুসলিমরা জানায়, দুর্গাপূজা হলে তাদের কোরবানিও করতে দিতে হবে। কিন্তু হিন্দু ধর্মালম্বীরা সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পূজা বন্ধ হয়ে যায়।
চন্দন সাউ নামে গ্রামেরই এক বাসিন্দা জানান, ‘২০১২ সালে এখানে আমরা গ্রামে পূজা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেই কারণে এখানে মূর্তিও নির্মাণ করা হল। কিন্তু প্রতিমা নির্মাণের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ তার বিরোধীতা করে বলে যে দুর্গাপূজা হলে এখানে গো-হত্যাও করা হবে’।
বাবলু হোসেন জানান ‘পূজা করার ক্ষেত্রে আমাদের কোন বাধা-নিষেধ নেই। আমরা কেবল বলেছি যে পূজা হলে ঈদে কোরবানিরও অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ আমাদের কোরবানিটাও তো সফল করতে হবে’।
দুই পক্ষের এই টানাপোড়েনের ফলেই ২০১২ সাল থেকেই গ্রামের মন্দিরে পড়ে রয়েছে আধা নির্মিত দুর্গা প্রতিমা। সদ্য শেষ হওয়া দুর্গোৎসবে পাশের গ্রামে গিয়ে উৎসবে সামিল হয়েছিল হিন্দুরা। অন্যদিকে কাংলাপাহাড়ী মসজিদে নিয়মিত নমাজ পড়া হলেও কোরবানি আজও হয় না। সব মিলিয়ে উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত দুই সম্প্রদায়ের মানুষই। প্রতি বছরই দুর্গাপূজার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনের বক্তব্য দুর্গাপুূজার অনুমতি দেওয়া হলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। তাই গোটা বিষয়ে হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছলে তবেই গ্রামের কোরবানি এবং পূজা দুইটারই অনুমতি দেওয়া হবে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্থানীয় ও রাজ্যস্তরের রাজনৈতিক নেতারা। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রায়ই সরব হতে দেখা যায়, আশ্চর্যজনকভাবে তিনিও বিষয়টি নিয়ে নীরব অবস্থান নিয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ অক্টোবর, ২০১৫/মাহবুব