পাক শাসিত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল ভারতের সেনাবাহিনী। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাক শাসিত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গিদের ডেরায় হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। পাক শাসিত কাশ্মীরের ভীমবার, হটস্প্রিং কেল ও লিপা সেক্টরে ভারতীয় সেনা কমপক্ষে ৭টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। অভিযান শেষ হয় বৃহস্পতিবার ভোর ৪.৩০ মিনিট নাগাদ। প্রায় চার ঘণ্টার ওই হামলার জেরে নিহত হয়েছে ৩৮ জঙ্গি। হামলায় ২ পাক সেনাও নিহত হয়েছে বলে খবর।
বৃহস্পতিবার ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত হলে ভারত আবার হামলা চালাবে। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ।
রণবীর সিং জানান, ‘চলতি বছরে অন্তত ২০ বার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান জঙ্গি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। এমনকি উরির হামলার পরও সেই চেষ্টা থামেনি। বুধবারও নিয়ন্ত্রণ রেখায় জঙ্গিরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এরপরই গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় সেনারা জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালায়। এই হামলায় কোন ভারতীয় সেনা আহত হননি। তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিদের কোনোভাবেই ভারতে ঢুকে হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না। ভারত সব সময় শান্তির পক্ষে কিন্তু পাকিস্তান যেভাবে ভারতের মাটিতে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে তা কখনোই ভারত মেনে নেবে না। রণবীর সিং আরও জানান, উরি কিংবা পুঞ্চ, ভারতের হামলা চালানোর পর জঙ্গিদের কাছ থেকে যে জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তা থেকে প্রমাণিত যে পাকিস্তান থেকেই ওরা এসেছে। পাক শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গাতেই ওই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছেও বলে জানিয়েছেন ডিজিএমও।
বুধবার রাতে সেনা অভিযানের পরই পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী পাঞ্জাবের ছয়টি জেলা থেকে গ্রামবাসীদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলকে ফোন করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার দূরে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ের প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করতে। সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত সমস্ত স্কুল-কলেজগুলিকেও পরবর্তী নির্দেশ জারি করা না পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে সেনা অভিযানের পরই বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে ফোন করে সেনা অভিযানের বিষয়টি জানান। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল মি. ভোরা এবং মুখ্যমন্ত্রী মেহেবুবা মুফতিকেও বিষয়টি জানানো হয়। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী, সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদকে ফোন করে সেনা অভিযানের বিষয়টি জানান রাজনাথ সিং। বিকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সেনা অভিযানের বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর উরির সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ১৮ জওয়ানের মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল হয়ে গোটা ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানার দাবি উঠতে থাকে। সবমিলিয়ে বেশ চাপে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শেষপর্যন্ত পাক শাসিত কাশ্মীরে ঢুকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল জঙ্গি ঘাঁটি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ
বিডি প্রতিদিন/২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ফারজানা