মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়ান-আমেরিকান বিষয়ক উপদেষ্টা বাংলাদেশি বংশেোদ্ভূত ড. নীনা আহমেদ বাস করেন পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায়। ডেমোক্রেটিক পার্টির সংগঠক হিসেবে তার তৃণমূলের সাথে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। কয়েক মাস আগে ফিলাডেলফিয়া সিটির ডেপুটি মেয়র হিসেবেও নিযুক্ত হন তিনি। ক্লিনটন পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে ড. নীনা এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারির পক্ষে চষে বেড়িয়েছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু নিজের অঙ্গরাজ্য পেনসিলভেনিয়াতেও হিলারিকে বিজয় এনে দিতে না পেরে প্রচন্ডভাবে ব্যথিত নীনা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের ‘অবিশ্বাস্য বিপর্যয়’ প্রসঙ্গে মৌলিক কয়েকটি ইস্যু চিহ্নিত করেছেন ড. নীনা। ৯ নভেম্বর বুধবার রাতে ফিলাডেলফিয়া থেকে টেলিফোনে এনআরবি নিউজকে বলেন, মিডিয়ার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপকর্মের তথ্য তেমনভাবে মিডিয়ায় আসেনি। এমনকি, জনমত জরিপেও প্রকৃত তথ্য উপস্থাপিত হয়নি। জরিপ ফলাফলের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় আমরাও ভোট প্রার্থনার গতি-প্রকৃতি যথাযথভাবে অনুসরণে সক্ষম হইনি। ট্রাম্প ১৬ বছর ট্যাক্স দেননি, নিজ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারিসহ মালামাল সরবরাহকারিদের ঠকাতে ছয় বার ব্যাক্রাপসী ঘোষণা, ভুয়া ইউনিভার্সিটির নামে শতশত ছাত্র-ছাত্রীর কাছে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ, সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে তরুণীদের সাথে অসদাচরণ ইত্যাদি তথ্য মিডিয়ায় ঠিকমতো আসেনি। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের ঘটনাটি প্রতিনিয়ত মিডিয়ায় এসেছে।
ড. নীনা বলেন, এশিয়ান, লাতিনো, কৃষ্ণাঙ্গরা ক্রমান্বয়ে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে। এমন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে নীরবে প্রচারণা চালায় ট্রাম্পের লোকজন। শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছেন-এমন কথাও শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। এটিও অন্যতম একটি কারণ হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়ে। বর্ণবাদি মনোভাবের আমেরিকান নারী-পুরুষেরা কোনভাবেই সহ্য করতে পারেন না হিলারির মতো বড় মনের মানুষকে। সাদা, কালো, বাদামি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, ইহুদি সকল ধর্ম, বর্ণ আর গোত্রের মানুষকে আপন করে নিয়ে বর্ণাঢ্য একটি রাজনৈতিক অভিযাত্রা শুরু করেছিলেন হিলারি। এটি বর্ণ আর জাতি বিদ্বেষী ট্রাম্প এবং তার অনুসারিদের রোষের কারণ হয়ে ওঠে। ভেতরে ভেতরে তারা মার্কিন মূল্যবোধের পরিপন্থি তৎপরতা চালিয়ে স্বল্প শিক্ষিত মানুষদের বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি নিজেরাও ভুল পথে চালিত হচ্ছেন।
ড. নীনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখছেন অভিবাসীরা। তা সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। মুসলমানদের আগমন বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন। মেক্সিকো থেকে লোক আসার পথ চিরতরে বন্ধ করতে দেয়াল নির্মাণের হুংকার দিয়েছেন। এর সবকিছুই যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের পরিপন্থি তা মিডিয়ায় ফলাও করে আসেনি। গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষের ভোটের মূল্য নেই আমেরিকায়। এবারও হিলারি ক্লিনটন সাধারণ মানুষের ভোট বেশি পেয়েও জয়ী হতে পারলেন না। এর আগে আল গোরসহ আরো পাঁচ প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে আমেরিকান নির্বাচনী মারপ্যাঁচে ধরাশায়ী হতে হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১০ নভেম্বর, ২০১৬/ফারজানা