ভারত জুড়ে সংখ্যালঘু ও দলিতদের ওপর নির্যাতন ও গণপিটুনির ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠল ভারতের সংসদ।
সোমবার সংসদের অধিবেশনে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময়ে লোকসভায় কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে শুরু করে তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়, এআইএডিএমকে সাংসদ ড. কে গোপাল, বিজু জনতা দল (বিজেডি)’এর তথাগত সতপথি সহ প্রত্যেকেই সরকার পক্ষর বিরুদ্ধে তোপ দাগে। এমনকি মুসলিম ও দলিতদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা করে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রবীণ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
গরুকে কেন্দ্র করে দেশে যে ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে তার নিন্দা করে তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন ‘এই ধরনের সহিংসতায় ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬৩ জন নিহত হয়েছে। আমি এই ঘটনায় হিন্দু-মুসলিম’কে আনতে চাই না কিন্তু ৯৭ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে কেন্দ্রে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর। এরমধ্যে ৮৬ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে মুসলিমদের ক্ষেত্রে। আমি সরকার পক্ষের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করতে চাই যে আপনারা প্রায়ই কংগ্রেস মুক্ত ভারত গঠনের কথা বলে থাকেন, এবার কি মুসলিম মুক্ত ভারত গঠনের কথা ভাবছেন?’ তিনি আরও জানান বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই সহিংসতার ঘটনার হার ৫২ শতাংশ।
সৌগত রায়ের ওই পরিসংখ্যানের পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু তার প্রতিবাদ করে জানতে চান কিসের ভিত্তিতে তিনি (সৌগত) এই দাবী করছেন।
রিজিজুর ওই বক্তব্যের পরই সৌগত রায় পাল্টা কট্টরপন্থী হিন্দুদলের সদস্যদের বাঁদর বলে মন্তব্য করে বসেন। তিনি জানান দেশজুড়ে ২৩ টি সহিংসতা ও গণপিটুনির ঘটনায় বজরং দল এবং হিন্দু গোষ্ঠীর সদস্যরা জড়িত ছিল। ইয়ে সব বাঁদর হ্যায় (এরা সবাই বাঁদর)। সৌগতের এই মন্তব্যের পরই হট্টগোল বেধে যায় সংসদে। তৃণমূল সাংসদের এই মন্তব্য সংসদ বিরোধী বলেও দাবি করেন সরকার পক্ষের সাংসদরা। বিজেপি সাংসদ এস.এস.আলুওয়ালিয়াও ওই মন্তব্যের বিরোধীতা করেন।
এর আগে দলিত নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে অভিযোগ করেন এতে পরোক্ষে গোরক্ষকদেরই প্রশয় দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। খাড়গে বলেন ‘এটা হিন্দুস্তান, একে লিঞ্চিস্তান(গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা) বানিয়ে ফেলবেন না। আমি বলব না যে সরকার প্রত্যক্ষভাবে এই ঘটনাগুলি ঘটাচ্ছে তবে পরোক্ষে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপি’র সঙ্গে সম্পৃক্ততাযুক্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল এবং গোরক্ষক’এর মতো সংগঠনগুলিকে প্রশয় দিচ্ছে’।
গরুর মাংস বহন বা গরু পাচারের অভিযোগে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খন্ড রাজ্যে একাধিক ঘটনা ঘটায় ওই দুই রাজ্যকে ‘গণপিটুনি কেন্দ্র’ বলেও উল্লেখ করেন খাড়গে। যদিও কংগ্রেস সাংসদের এই বক্তব্যকে খন্ডন করেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি জানান বিষয়টি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন তাই এই বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করা উচিত নয়। বিজেপির আরেক সাংসদ হুকুমদেব নারায়ন যাদব জানান ‘বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রকাশ্যে এই গণপিটুনি বা নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা করেছেন। গণপিটুনি সম্পর্কিত যে কোন ঘটনা নিয়ন্ত্রণে যে আইন রয়েছে তা পালন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির ওপরই বর্তায়’।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন