রাত পোহালেই স্বাধীনতা লাভের ৬১ বছরে পা রাখছে পর্যটন নগরী মালয়েশিয়া । ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে রক্তপাতহীন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি।
স্বাধীনতা লাভের পর টানা ৬০ বছর দেশটির সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বারিসান ন্যাশনাল সরকারের হাত ধরে স্বাধীনতা দিবস পালন আসছে । ২০১৮ এর নির্বাচনে তাদের শোচনীয় পরাজয়ের কারণে, সাবেক বারিসান ন্যাশনালের প্রভাবশালী নেতা, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও পাকাতান হারাপান জোটের অন্যতম নেতা তুন মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে এ প্রথম মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করবে পাকাতান হারাপান জোট সরকার।
ইতিমধ্যেই স্বাধীনতা দিবস পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নতুন জোট সরকার । রাত ১২টা ১ মিনিটে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় শুরু হবে স্বাধীনতা দিবসের মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে কুয়ালালামপুরসহ সকল শহরগুলো ছেয়ে গেছে ব্যানার-ফেস্টুন ও নানা আকারের জাতীয় পতাকায়। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহঙ্কারের দিন এটি।
মালয়েশিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াই সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা তখন থেকেই। এরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়া সফরে গেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত ভিত্তিতে দাঁড়াতে সক্ষম হয়।
আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগেও মালয় অঞ্চলে মানুষের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া গেছে। সুদূর অতীতে এ অঞ্চলে হিন্দু-বৌদ্ধ শাসকদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩ শতকে এই উপদ্বীপে ইসলামের আগমন ঘটে। ১৫ শতকে মালাক্কান সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক কারণে মধ্য এশিয়া, ভারত ও আরবদের সঙ্গে মালয়ের সংযোগ স্থাপিত হয়।
গত ৩ দশকে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি লাভ করে। যার জন্যে পুরো বিশ্ব একবাক্যে ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত নেতৃত্বদানকারী মাহাথির মোহাম্মদকে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আজও তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া।
১৯৭০ সালেও মালয়েশিয়ার অধিকাংশ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। ১৯৭১ সালে নতুন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে মালয়েশিয়া। সেই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৯০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়াতে দারিদ্র্যের হার বিস্ময়করভাবে কমে আসে।
মালয় ভাষা মালয়েশিয়ার সরকারি ভাষা। এছাড়াও ইংরেজি ভাষাও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দেশটিতে আরও প্রায় ১৩০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে চীনা ভাষার বিভিন্ন উপভাষা, বুগিনীয়, দায়াক, জাভানীয় এবং তামিল ভাষা উল্লেখযোগ্য।
মালয়েশিয়ার ১৩টি রাজ্য (নেগেরি) হল জোহর, কেদাহ, কেলান্তান, মেলাকা, নেগেরি সেমবিলান, পাহাং, পেরাক, পারলিস, পুলাউ, পেনাং , সাবাহ, সারাওয়াক, সেলাঙ্গর এবং তেরেঙ্গানু। আর ৩টি এলাকা কুয়ালামলামপুর, লাবুয়ান ও পুত্রাজায়া শহরসহ একটি ফেডারেল টেরিটরি (ওয়িলাইয়াহ পেরসেকুতুয়ান)।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। তবে বৌদ্ধ, তাও, হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য উপজাতীয় ও সংখ্যালঘু স্বাধীনভাবে পালিত হয়। এখানে মালয় ও আদিবাসী মিলে রয়েছে সর্বমোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ। এছাড়া চীনা ২৮ ভাগ, ভারতীয় ৮ ভাগ এবং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ৪ ভাগ।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা