আশঙ্কার ১৫ মিনিট। চাঁদে পা ফেলার অন্তিম ১৫টা মিনিটই ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের। আর সেই আশঙ্কাই শেষমেশ সত্যি হল। চাঁদের পিঠে পা রাখার থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকাকালীনই হারিয়ে গেল ভারতের বিপুল অর্থব্যয় তৈরি চন্দ্রযান-২ ল্যান্ডার বিক্রম। কোনওভাবেই আর যোগাযোগ করা গেল না তার সঙ্গে। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদে পৌঁছানোর মিশনে ব্যর্থ হলো ভারত।
ইসরোজুড়ে তখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছে ইসরো প্রধান কে সিভনের। মাথা নিচু করে বসে রয়েছেন চন্দ্রযান ২-এর সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা। গত কয়েক বছরের পরিশ্রম, স্বপ্ন, আশা, পরিকল্পনা, গবেষণায় ইতি টেনে দিল সেই ১৫ মিনিট। ভারতের স্থানীয় সময় রাত ৩টা বেজে ১০ মিনিট নাগাদ ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দিলেন, যে সাংবাদিক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে।
বেঙ্গালুরুর ইসরো দফতর থেকে সিভন জানালেন, পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগিয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ২.১ কিলোমিটার আগে পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই পারফর্ম করেছে সে। তারপরই তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরপর অনেকখানি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও ইতিবাচক কোনও উত্তর মেলেনি। ভোররাতে একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়, ইসরায়েলের পর ব্যর্থ ভারতের মিশন চন্দ্রযান ২। একরাশ হতাশা যেন গ্রাস করেছে বিজ্ঞানীদের।
শনিবার সকালে যখন ইরসো থেকে বেরিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তখন আর নিজের হতাশা এবং আবেগকে চেপে রাখতে পারলেন না কে সিভন। মোদির কাঁধে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে ফেললেন। তিনিও যে রক্ত-মাংসের মানুষ। ব্যর্থতায় বুকের ভিতরটা খালি হয়ে যায় তারও। শুধু তো তার নয়, এ মিশনে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ গোটা দেশের ব্যর্থতা। ভেঙে পড়া সিভনকে সামলে নেন মোদি। তাকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিতে থাকলেন মোদি।
উল্লেখ্য, চাঁদের মাটি ছুঁতে পারেনি ভারতের চন্দ্রযান-১। চাঁদ মুলুকে পৌঁছনোর আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে ‘মৃত্যু’র আগে চাঁদে জলের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিল। প্রথম চন্দ্রাভিযানের সেই ব্যর্থতা ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতেই এই ভারতের দ্বিতীয়বারের মতো চন্দ্রযাত্রা করে। আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং অনেক বেশি অর্থব্যয় তৈরি চন্দ্রযান-২ করে। তবে তা চাঁদের পিঠে পা রাখার থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকাকালীনই হারিয়ে গেল ল্যান্ডার বিক্রম।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক