নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয় বরং নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (ক্যা) আনা হয়েছে বলে ফের মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রবিবার পশ্চিমবঙ্গের বেলুড় মঠের যুব দিবসের অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন "গত কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে যুব সমাজের মধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চর্চা চলছে যে এই আইন আসলে কি ? এই আইন নিয়ে আসার কি প্রয়োজনীয়তা ছিল ? যুব সমাজের মনে অনেক প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক যুবক এই ব্যাপারটা নিয়ে সচেতন কিন্তু এমন অনেক আছে যাদের মনে ভুল ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক তরুণ ভুল ধারণায় প্রভাবিত হয়েছেন। তাদের সঠিক বোঝানো, সন্তুষ্ট করার দায়িত্ব আমাদের।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন "এমনটা নয় যে, দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য ভারত সরকার রাতারাতি একটা আইন তৈরি করেছে। আমাদের সবার জানা উচিত যে অন্য দেশ থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসা যেকোন ধর্মের মানুষ ভারতের উপর আস্থা রাখে, ভারতের সংবিধানকে মানে তাদের জন্য এই আইন। নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নয় বরং এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। এই আইনের মধ্যে একটা সংশোধন করা হয়েছে, যাতে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়া আরেকটু সহজ হয়। এটা তাদের জন্যই করা হয়েছে যারা দেশভাগের পর পাকিস্তানে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়েছে, হামলা হয়েছে, জীবনধারণ মুশকিল হয়ে গেছে মা-বোনদের ইজ্জত নেওয়া হয়েছে।"
মোদির অভিমত "স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীসহ অনেক বড় বড় পন্ডিত, বিদ্বজনরা বলেছিলেন ধর্মীয় কারণে পাকিস্তানে যে সব মানুষের উপর অত্যাচার নেমে এসেছিল ভারতে এইসব নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। আমরা কেবলমাত্র গান্ধীজীর সেই ইচ্ছা পূরণ করেছি। উনি যেটা বলেছেন সেই কাজটাই আমরা করছি।"
বেলুড় মঠের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন "আপনারাই বলুন এই সব শরণার্থীদেরকে মৃত্যুর জন্য ওই সব দেশে ঠেলে দেয়া উচিত? আমাদের মতই ওই সব শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিক বানানো উচিত কি না? আর যদি মোদি এই কাজ করে তাহলে কি আপনারা আমাদের সাথে আছেন? হাত উঠিয়ে বলুন, আপনারা আমাদের সাথে আছেন কিনা। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরাও হাত উঠিয়ে তাতে সম্মতি জানায়। তুমি ফের একবার জানান "এই আইনে আমরা নাগরিকত্ব দিচ্ছি, কোনোভাবেই কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে না।"
নাম না করেই কংগ্রেস-তৃণমূল সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশানা করে মোদি বলেন, "আপনারা সব ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও এই আইনের ব্যাপারটি বুঝে গেছেন, অথচ যারা রাজনীতি করছে তারা এখনো বোঝার চেষ্টাই করছেন না। কিছু কিছু মানুষ রাজনীতির কারণে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে লাগাতার বিরোধিতা করে আসছে।"
ক্যা ইস্যুতে পাকিস্তানকে তোপ দেগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন "আমরা যদি এই আইনে সংশোধন না আনতাম, তবে বিশ্ব জানতোই না যে পাকিস্তানে বসবাসকারি অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি কিভাবে অত্যাচার হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মা বোনেদের জীবন বরবাদ করা হচ্ছে। এবার পাকিস্তানকেও জবাব দিতে হবে যে ৭০ বছর থেকে সেখানে সংখ্যালঘুদের উপর কেন অত্যাচার হচ্ছে।"
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (ক্যা) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে কংগ্রেস, সিপিআইএম, তৃণমূলসহ বিরোধী দলগুলো বেশ কিছুদিন ধরে লাগাতার বিক্ষোভ, আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই আন্দোলনে বিরোধীদের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। গত মাসেই এই বিক্ষোভ আন্দোলন কোথাও কথা সহিংসতার চেহারা নিয়েছে। এতে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট পাশাপাশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের অভিযোগ একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে টার্গেট করতেই এই আইন আনা হয়েছে। তাই বিরোধীদের সব প্রশ্নের জবাব দিতে এদিন বেলুড় মঠকেই বেছে নিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বেলুড়ের মঞ্চে বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দের জন্মতিথিতে আমার শুভেচ্ছা জানাই সকলকে। আমি মঠের সভাপতি ও অন্যান্যদের কাছে কৃতজ্ঞ যে আমাকে গতকাল রাতে এখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছেও কৃতজ্ঞ থাকা সত্ত্বেও, আমি এখানে থাকতে পেরেছি।" তার অভিমত "বেলুড় মঠ কোনও তীর্থস্থানের থেকে কম নয়। কিন্তু এটা আমার কাছে সব সময় বাড়ি ফেরার অনুভূতি।
এর আগে রবিবার সকালে বেলুড় মঠের অতিথি নিবাস থেকে স্বামীজীর ঘরে যান প্রধানমন্ত্রী মূল মন্দিরের সন্ন্যাসীদের সাথে দেখা করেন তিনি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। মাঠেই বিশেষ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন তিনি।
বেলুড় মঠ থেকে জলপথে কলকাতার মিলেনিয়াম পার্কে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেখান থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের ১৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন মোদি। এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই তিনি এদিন সকালে মোদির সাথে মঞ্চ শেয়ার করেন নি বলে খবর। গত শনিবার কলকাতা রাজভবনে মোদি-মমতা বৈঠকের পরই বিরোধী দল সিপিআইএম-কংগ্রেস মমতার দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার