নারী ক্ষমতায়ণের বর্ণাঢ্য অভিযাত্রা এবং বর্ণ-বিদ্বেষমূলক মনোভাবের পরিসমাপ্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটবে বুধবার। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ-অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের প্রথম বক্তব্যের সময় উদ্ভাসিত হবে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সময় মাস্ক পরিহিত দুই নারী নিকটেই মঞ্চে বসা। একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, আরেকজন স্পিকার ন্যান্সি পেলসি। কমলা বসবেন ইউএস সিনেটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। আর পেলসি হচ্ছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার। উভয়েই ডেমক্র্যাট। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।
অপরদিকে, ৪৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে জো বাইডেনের এটি প্রথম ঘটনা। এর আগে বারাক ওবামার ৮ বছরের প্রেসিডেন্সির সময়ে তিনি মঞ্চে বসেছেন। তারও আগে অর্থাৎ প্রায় ৩৬ বছর আগে থেকে তিনি সিনেট সদস্য হিসেবে বরাবরই সাথী সিনেটরদের সাথে অধিবেশনে বসেছেন। প্রেসিডেন্ট রনাল্ড রিগ্যানের আমলে অন্তত: দু’বার যৌথ অধিবেশনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের প্রদত্ত ভাষণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ডেমক্র্যাট হিসেবে। এমন ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে আর কোন রাজনীতিকের জীবনে এখন ঘটেনি।
এসব কারণে এবারের বক্তব্যেও ভিন্ন কিছুর সংযোজন ঘটতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। বেশ কদিন থেকেই বক্তব্য কী দেবেন তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে শলাপরামর্শ করছেন বাইডেন। স্ক্রিপ্ত তৈরী করছেন। তা পরখ করছেন। সংযোজন-বিয়োজন করছেন নিজেই। তবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ৯৯দিনের কৃতিত্ব/সাফল্য উপস্থাপনের পাশাপাশি পরবর্তী বছরের কর্মসূচির আলোকপাত করতে পারেন বাইডেন। হেলথ কেয়ার সহজলভ্য করার পাশাপাশি করোনায় বিপর্যস্ত আমেরিকানদের জন্যে আরো আর্থিক-সহায়তার পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন। পুলিশী ব্যবস্থায় সংস্কারের পুরনো অঙ্গিকারের কথা আরো জোরালোভাবে বলতে পারেন। বর্নবাদ নির্মূলের অভিপ্রায়েও কিছু পরিকল্পনা থাকতে পারে তার বক্তব্যে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মুরুব্বীয়ানা পুনপ্রতিষ্ঠার জন্যেও কিছু কৌশলের প্রসঙ্গ থাকতে পারে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সমাজ-জীবনে যে হতাশা আর অস্থিরতা বিরাজ করছে তার অবসানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করতে পারেন বাইডেন।
করোনার কারণে এবার কংগ্রেসম্যান কিংবা সিনেটররা কোন অতিথি আনতে পারবেন না। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরাও আমন্ত্রিত হননি। সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির মধ্যে মাত্র প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্ট থাকতে পারেন ফ্লোরে। জয়েন্ট চীফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক এ মিলি উপস্থিত থাকবেন সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি নিধি হিসেবে। ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এবং সেকেন্ড জেন্টেলম্যান ডোগ ইমহোফ কয়েকজন অতিথি আনবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সামান্যসংখ্যক কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর বসবেন ফ্লোরে। অন্যেরা গ্যালারিতে বসবেন বলে সর্বশেষ সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, সচরাচর ১৬০০ জনের সমাগম ঘটেছে প্রেসিডেন্টের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্যের সময়। এবার মাত্র ২০০ জন থাকবেন চেম্বারে। আরো উল্লেখ্য, এই অধিবেশনকে ‘জাতীয় বিশেষ নিরাপত্তা ইভেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এজন্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি সংস্থাসমূহের পদস্থ কর্মকর্তারা তাদের অধিনস্ত লোকজন দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার তদারকি করবেন। গত ৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের জঙ্গি তৎপরতার কথা বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে অর্থাৎ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে আগেরদিন থেকেই ক্যাপিটল হিল এলাকাকে।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন