মারিউপোলের রুশ বাহিনীর পরবর্তী টার্গেট ওডেসা নগরী বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের জেনারেল স্যার রিচার্ড ব্যারন।
সোমবার বিবিসির রেডিও ৪-কে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী ওডেসা রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট। ওডেসা দখলে নিয়ে ইউক্রেনের অর্থনীতিকে কৃষ্ণ সাগর (বাণিজ্য পথ) থেকে বিচ্ছিন্ন করবে রাশিয়া।”
“এভাবেই রাশিয়া ইউক্রেনকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এবং কিয়েভের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকবে। কেননা, এটি রাজনৈতিক কেন্দ্রের মধ্যমণি,” যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ওপর ব্যাপকভাবে শক্তি প্রয়োগ করছে। তারা ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরবরাহ লাইন, তাদের রসদ এবং বিমানঘাঁটি এবং সেইসাথে যুদ্ধরত বাহিনীকে আঘাত করেই চলেছে।”
“এরপর তারা শহরের অভ্যন্তরে এবং গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়বে যেগুলোতে তাদের দখলে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে রুশ বাহিনী,” যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় নগরী মারিউপোল। আজভ সাগরের উপকূলবর্তী ও কালমিয়াস নদীর মুখে অবস্থিত প্রায় তিন লাখ মানুষের এই নগরী বর্তমানে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী।
মারিউপোলে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে আত্মসমর্পণের সময় বেঁধে দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছিল রুশ বাহিনী। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটার (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা) মধ্যে আত্মসমর্পণের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে বেসামরিক নাগরিকদের শহর ছেড়ে যাওয়ার জন্য দুটি মানবিক করিডোর দেওয়া হবে।
কিন্তু ইউক্রেন সেই রুশ বাহিনীর সেই আল্টিমেটাম প্রত্যাখান করেছে। স্থানীয় ইউক্রেনস্কা প্রাভদা নিউজ আউটলেটে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “কোনও আত্মসমর্পণ কিংবা অস্ত্র সমর্পণের প্রশ্নই আসে না।”
নগরীর মেয়রের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, রাশিয়ার কোনও প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করা যায় না। প্রতিরোধকারীরা শেষ সৈনিকের জীবন বেঁচে থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।
এদিকে, আল্টিমেটামের চূড়ান্ত সময়সীমার পেরিয়ে গেছে। তবে তার আগেই সেখানে আকাশ, স্থল ও সমুদ্র থেকে একযোগে হামলা চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেছে রুশ বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে বিবিসির সাংবাদিক হুগো বাচেগা জানিয়েছেন, ভূতুরে এক নগরীতে পরিণত হয়েছে মারিউপোল। কেননা, এরই মধ্যে সেখানে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। নগরীর কোথাও নেই বিদ্যুৎ। চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও কমে গেছে আশঙ্কাজনভাবে। পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে নানা ধরনের রোগ।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, নগরীর বাসিন্দারা তাদের বেশিরভাগ সময় আশ্রয়কেন্দ্র এবং বেসমেন্টে কাটাচ্ছেন। কারণ রাশিয়া স্থল, আকাশ এবং সমুদ্র থেকে শহরটির উপর একযোগে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে মারিউপোল। বিভিন্ন ছবি দেখলে বুঝা যায় আশেপাশের এলাকাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় মেয়র, ভাদিম বয়চেঙ্কো, গত সপ্তাহে তাকে বলেছিলেন যে রুশ বাহিনীর অভিযানে ৮০ শতাংশের বেশি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে আগেই। পরিস্থিতি এমন যে এর এক তৃতীয়াংশ কখনও মেরামতও করা যাবে না।
রুশ অভিযানে নিহত লাশগুলো রাস্তায় রাস্তায় পড়ে আছে। কারণ সেগুলো কাছে গিয়ে নিয়ে আসা খুবই বিপজ্জনক। শেষ পর্যন্ত কিছু লাশ সংগ্রহ করা গেলেও সেগুলোকে গণকবরে সমাহিত করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সেখানে।
এমনকি রাশিয়ার একজন জেনারেল স্বীকার করেছেন যে শহরটিতে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। তবে আশ্চর্য বিষয় হল, তিনি স্বীকার করেননি যে তার বাহিনী এর জন্য দায়ী।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে এই অভিযান শুরু হয়। এরই মধ্যে সোমবার ২৬তম দিনে গড়িয়েছে রুশ অভিযান। বিগত ২৫ দিনে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি নগরী দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/কালাম