সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। ইউক্রেনের লুহানস্ক ও ডোনেটস্ক অঞ্চলকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এরপর ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ৩৪তম দিনে গড়িয়েছে রাশিয়ার অভিযান। বিগত ৩৩ দিনে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি নগরী দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে ইউক্রেনও।
সংকট নিরসনে এর আগে বেলারুশে চারবার আলোচনায় বসে উভয় দেশের প্রতিনিধি দল। তবে এসব আলোচনায় কোনও সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হয়নি।
এমতাবস্থায় মঙ্গলবার আবারও মুখোমুখি আলোচনায় বসতে যাচ্ছে দুই দেশ। বাংলাদেশ সময় দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের আতিথেয়তায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই শান্তি আলোচনা।
এরই মধ্যে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘আল-জাজিরা’ জানিয়েছে, ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে সামরিক অভিযানের মতো মূল শর্ত থেকে সরে এসেছে রাশিয়া। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়েও কোনও আলোচনা করতে চায় না রাশিয়া। বরং এখন তারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক নিরপেক্ষতার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তুরস্কে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আলোচনার ড্রাফ্ট থেকে এই তথ্য জানা গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে কি এবার শেষ হবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ!
সম্প্রতি রুশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা এখন শুধুমাত্র পূর্ব ইউক্রেনের উপরে নজর দিচ্ছে। কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা, মস্কো হয়তো তার উচ্চাকাঙ্খা কমিয়ে লক্ষ্যস্থির করতে চাইছে। হয়তো যুদ্ধ থামাতে চাইছে তারাও। তবে তার আগে মস্কোর সমঝোতাসূত্র ‘সাবধানে’ বুঝেশুনে নিতে চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রাশিয়ার দেওয়া শর্তের মধ্যে অন্যতম হল ইউক্রেনের ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’। অর্থাৎ ন্যাটোতে ঢোকার চেষ্টা করবে না তারা। পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ার স্বপ্নও রাখবে না ইউক্রেন। জেলেনস্কি নিজেই জানিয়েছেন এ কথা। বলেছেন, “আমরা এই শর্ত মেনে নিতে রাজি।”
সাংবাদিকদের কাছে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, “যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এসব কারণেই। তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বজায় থাকছে কি না, সেটা দেখার বিষয়। ওরা অবশ্য বলছে, ওদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। সেটা বুঝতে পারছি। আলোচনা চলছে। বিষয়টা গভীর। তবে এসব আলোচনা যাতে এক টুকরো কাগজেই থেমে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে আমি বেশি আগ্রহী। যাতে কাগজেকলমে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি করা যায়, তাতে আগ্রহী।”
ক্রিমিয়া ও ডনবাস নিয়েও যা যা সমস্যা রয়েছে, তা এই শান্তি আলোচনাতে শেষ করতে চান তিনি। তবে রুশ মধ্যস্থতাকারীরা যেন না বলেন, ইউক্রেন থেকে ‘নাৎসিবাদ’ মুছতে চান তারা। এ অভিযোগ তুললে তার দেশ আলোচনাতেই যাবে না। ওই শব্দটা শুনতে রাজি নন জেলেনস্কি। তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
বিডি প্রতিদিন/কালাম