স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় ফের শুরু হবে পাকিস্তান পার্লামেন্টের অধিবেশন। অন্য আর দশটা অধিবেশনের মতো নয় এটা। এই অধিবেশন ঘিরে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে আতঙ্ক আর উত্তেজনা। ২২ বছরের সাধনায় ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী ইমরান খান, ক্ষমতায় এসেছিলেন ২২ বছরের নানা রাজনৈতিক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ইমরান। ক্রিকেটের মতো তার এই মসনদ দখলটাই অনেকটা চমকপ্রদ।
তখনই অনেকেই বলেছিলেন সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। কারও কটাক্ষ ছিল ইমরান সেনাবাহিনীর পালকপুত্র। এসবের মাঝেও তার মাথায় বড় বোঝা হয়েছিল পাকিস্তানের অর্থনীতির বেহাল দশা। তবে তার মধ্যেই বৈরিতাকে পলকা ইয়র্কারে উড়িয়ে এগিয়ে চলছিলেন কাপ্তান খান। রাশিয়া আর চীনের যুগলবন্দি সম্পর্কে করছিলেন টিকে থাকার চেষ্টা।
তবে চার বছর না পেরোতে আরেক চমক হাজির ইমরানের ক্যারিয়ারে। অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব এরই মধ্যে পার্লামেন্টে পেশ করেছেন পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ। আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সময় বিকাল চারটায় পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হবে। আর সেখানেই ইমরানের বিরুদ্ধে ওঠা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে হবে বিতর্ক। তারপর ৩ এপ্রিল হতে পারে অনাস্থা ভোট।
এমন পরিস্থিতিই ইমরান একটা ‘গোপন চিঠি’ পকেটে নিয়ে ঘুরছেন। তার দাবি, এই চিঠিতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ আছে। মন্ত্রী পরিষদকে এরই মধ্যে চিঠিটি দেখিয়েছেন ইমরান। পার্লামেন্টেও ক্যামেরা সেশনে সেই ‘গোপন চিঠি’ দেখানোর কথা রয়েছে।
ইমরানের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই চিঠিতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের পরিষ্কার প্রমাণ রয়েছে। সাথে ইমরানের সরকারকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইমরানও বলেছেন, বিদেশ থেকে ফোন কল দিয়ে একদল লোক পাকিস্তান চালাতে চাইছেন। আর তারা মানুষের জন্য কাজ করা সরকারকে সহ্য করতে পারছে না।
তবে ইমরানের দল ষড়যন্ত্রকারী কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেনি। তবে অনেকে বলছে, ষড়যন্ত্রকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেই বোঝানো হচ্ছে। কারণ ইউক্রেন অভিযানের মধ্যে ইমরানের রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। তবে পাকিস্তানী গণমাধ্যম ডনের খবর বলছে, ইমরান খানের সরকারকে কোনও ধরনে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
চিঠির বিষয়ে সেনাপ্রধান ও সামরিক নেতাদের সাথেও ইমরান বুধবার দুই বার দেখা করেছেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি। তিনি এটাও বলেছেন, যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইমরানকে পদত্যাগ করতে বলেনি।
সেনাবাহিনীর সাথে ইমরানের সম্পর্ক এখন কেমন সে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সব সময় রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িয়ে পড়লেও এখনও অনাস্থা ভোটের বিষয়ে কোনও কথা বলেনি, নেয়নি কারও পক্ষ।
এদিকে নিজ জোটের শরীকরাও ইমরানের পাশ থেকে সরে যাচ্ছে। মুত্তাহিদা কওম মুভমেন্ট তেহরিক-ই-ইনসাফের সঙ্গ ছাড়ায় এরই মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে ইমরানের দল। অনাস্থা ভোট হলে পরিষ্কারভাবেই ইমরান হেরে যেতে পারেন বলেই জানাচ্ছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম।
তাই ভাঙাচোরা দল নিয়ে ইমরান খান ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করতে পারলেও ‘গোপন চিঠি’ তত্ত্বের ইয়র্কারে গদি বাঁচাতে পারবেন কিনা, সেটাই এখন সময় সাপেক্ষ প্রশ্ন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল