টানা প্রায় ১০ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন ও গণহত্যা চালাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। ইসরায়েলের এই প্রাণঘাতী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ক।
সর্বশেষ হুঁশিয়ারি দিয়ে তুরস্ক নাগোরনো কারাবাখ ও লিবিয়ার মতো ইসরায়েলে ঢুকতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
আর এরই প্রতিক্রিয়ায় সামরিক জোট ন্যাটো থেকে তুরস্ককে বহিষ্কারের আর্জি জানিয়েছে ইসরায়েল।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার ন্যাটোকে জোটটির সদস্য হিসেবে তুরস্ককে বহিষ্কারের আহ্বান জানান।
তবে এই আহ্বানে এই ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ইসরায়েল আক্রমণের হুমকি এবং তার বিপজ্জনক বক্তব্যের আলোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ তুরস্কের নিন্দা জানিয়েছেন ও আঞ্চলিক জোট ন্যাটো থেকে তুরস্ককে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি ইসরায়েলি কূটনীতিকদের জরুরিভাবে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সাথে যুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, অতীতে লিবিয়া এবং নাগোরনো-কারাবাখের মতো এবার তুরস্ক ইসরায়েলে প্রবেশ করতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গত রবিবার জানান। যদিও এর দ্বারা কী ধরনের হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছেন তা উল্লেখ করেননি তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। রবিবার তার দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রশংসা করে দেওয়া বক্তৃতার সময় এই যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন তিনি।
গত রবিবার এরদোয়ান তার ক্ষমতাসীন একে পার্টির এক বৈঠকে বলেন, “আমাদের অবশ্যই খুব শক্তিশালী হতে হবে যাতে ফিলিস্তিনের সাথে ইসরায়েল এই হাস্যকর কাজগুলো করতে না পারে। আমরা যেভাবে কারাবাখে প্রবেশ করেছি, যেভাবে আমরা লিবিয়ায় প্রবেশ করেছি, আমরা তাদের (ইসরায়েলের) ক্ষেত্রেও একই কাজ করতে পারি।”
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ওই ভাষণে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আরও বলেন, “আমরা এটি না করার কোনও কারণ নেই... আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে যাতে আমরা এই পদক্ষেপগুলো নিতে পারি।”
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান রবিবারের ভাষণে তুরস্কের অতীত কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন বলে মনে হচ্ছে। ২০২০ সালে লিবিয়ার জাতিসংঘ-স্বীকৃত সরকারের সমর্থনে দেশটিতে সামরিক বাহিনীর সদস্য পাঠিয়েছিল তুরস্ক।
লিবিয়ার ত্রিপোলি-ভিত্তিক জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুলহামিদ আল-দাবিবাহকে তুরস্ক সমর্থন করে।
এছাড়া নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজানের সামরিক অভিযানে সরাসরি কোনও ভূমিকা রাখার কথা অস্বীকার করে থাকে তুরস্ক। কিন্তু গত বছর তুরস্ক বলেছে, তারা তার এই ঘনিষ্ঠ মিত্রকে (আজারবাইজান) সহায়তা করার জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিকীকরণসহ ‘সকল উপায়’ ব্যবহার করছে।
এদিকে গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর পরিণতি হিটলারের মতো হবে বলে সোমবার ঘোষণা দেয় তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিন এক বিবৃতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “যেভাবে গণহত্যাকারী নাৎসিদের জবাবদিহি করা হয়েছিল, তেমনি যারা ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করতে চায় তাদেরও জবাবদিহি করা হবে। মানবতা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াবে। আপনি ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করতে পারবেন না।” সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/একেএ