হিমালয়ের চৌখাম্বা পর্বত অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া দুই নারী পর্বতারোহীকে তিনদিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে বেডফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা ফে মানার্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর্বতারোহী মিশেল ডভোরাকের খাবার, তাঁবু ও পর্বতারোহণ সরঞ্জাম বহনকারী দড়ি ছিঁড়ে যায়। সবকিছু হারিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে তিনদিন টিকে ছিলেন তারা।
দুই পর্বতারোহী চৌখাম্বা পর্বতের প্রায় ২০ হাজার ফুট (৬,০৯৬ মিটার) ওপর থেকে তাদের উদ্ধারের জন্য জরুরি বার্তা পাঠালেও প্রতিকূল আবহাওয়ায় উদ্ধারকারী দলগুলো প্রথমেই তাদের খুঁজে পায়নি।
ফে মানার্স জানান, তারা বেশ ভয় পেয়ে এক পর্যায়ে একা নেমে আসার চেষ্টা করেছিলেন। পরে উদ্ধারকারীদের সঙ্গে দেখা হয়।
পর্বতারোহণ এবং কঠিন পরিবেশে টিকে থাকতে দক্ষ ফে মানার্স জানান, একটি আলগা পাথরে লেগে তাদের ব্যাগের দড়ি কেটে যায়। তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ব্যাগটি পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম, এর পরিণতি কী হতে চলেছে। আমাদের কাছে আর কোনও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না। কোনও তাঁবু নেই। বরফ গলিয়ে পানি তৈরি করার জন্য কোনও চুলাও নেই। রাতের জন্য নেই গরম পোশাক। বেসক্যাম্পে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় আইস পিক্স এবং ক্র্যাম্পনসও ছিল না। রাতে চলাফেরার জন্য ছিল না কোনও হেড টর্চ।
তবে তারা জরুরি বার্তা পাঠাতে পেরেছিলেন। এর ফলে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। পরের দিন সকালে একটি হেলিকপ্টার তাদের খুঁজতে আসলেও পায়নি তাদের সন্ধান। তাই আরও ২৪ ঘণ্টা পর্বতে কাটাতে বাধ্য হন দুই পর্বতারোহী।
একটি শিলার ওপর যখন তারা আশ্রয় নেন তখন শুরু হয় তুষারপাত। একটি মাত্র স্লিপিং ব্যাগ ভাগ করে নেন। ফে মানার্স বলেন, খাবারের অভাবে আমার শরীর উষ্ণ থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলছিল। উদ্ধারকারীরা আমাদের খুঁজলেও আবহাওয়া ছিল ভয়ানক। খারাপ আবহাওয়া, কুয়াশা, উচ্চতা– এগুলো তাদের কাজ আরও কঠিন করে তুলেছিল। এছাড়া, পাহাড়ের যে অংশে আমরা ছিলাম সেটা অনেক বড় হওয়ায় তারা আমাদের খুঁজে পায়নি।
ফে মানার্স বলেন, তারা কোনও খাবার ছাড়াই ঝড় এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে কোনওমতে বেঁচে ছিলেন। তিনি বলেন, হেলিকপ্টার আবারও উড়ে গেল, কিন্তু আমাদের দেখতে পেল না। আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম, হেলিকপ্টার আমাদের উদ্ধার করতে পারবে না, তাই নিজেদেরই নিচে নামার চেষ্টা করতে হবে।
দ্বিতীয় সকালে তারা ধীরে ধীরে শিলার গা বেয়ে নামতে শুরু করেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে যে কোনও ভুলেরই আশঙ্কা ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে তারা একটি ফরাসি পর্বতারোহী দলের দেখা পান। সেই দলটি তাদের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতেন। ফরাসি দলটি তাদের সরঞ্জাম, খাবার এবং স্লিপিং ব্যাগ দুই নারী পর্বতারোহীর সঙ্গে ভাগ করে নেয় এবং হেলিকপ্টারকে নির্দিষ্ট স্থান নির্দেশ করে।
ফে মানার্স বলেন, স্বস্তিতে কেঁদেছিলাম আমি। জানতাম যে, হয়তো আমরা বাঁচতে পারব। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/একেএ