ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার বর্ষপূর্তি আজ। ২০২৩ সালের ৭ আক্টোবর থেকে ওই উপত্যকায় হামলা চালিয়ে আসছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। দেশটির এ হামলার পেছনে ব্যাপকভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সরবরাহ করা বোমায় নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে দেওয়া সামরিক সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্টের তথ্যানুসারে, গত বছরের সাত আক্টোবর থেকে ইসরায়েলকে ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গাজায় হামলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে আয়রন ডোম এবং ডেভিডের স্লিং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবস্থার জন্য চার বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া তারা অস্ত্র ও জেট ফুয়েলের জন্যও অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক অভিযানের জন্য অতিরিক্ত চার দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের তহবিল সরবরাহ করা হয়েছে।এরমধ্যে লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে হুথিদের হামলা দমনে পরিচালিত অভিযানের খরচও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গাজা অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী অব্যাহতভাবে দুই হাজার পাউন্ডের এমকে-৮৪ বোমা ব্যবহার করছে। মার্কিন এ বোমা নিমিষেই যেকোনও ভবনকে ধসিয়ে দিতে পারে। এছাড়া এ বোমার প্রভাবে শত শত মিটার এলাকাজুড়ে থাকা মানুষকেও হত্যা করা যায়।
আলজাজিরা জানিয়েছে, মার্কিন এ বোমাগুলো এফ-১৫ বা এফ-১৬ সিরিজের যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা হয়েছে। এটি মার্ক-৮০ সিরিজের বর্ধিত সংস্করণ।
দুই হাজার পাউন্ডের এ বোমা এক হাজার ফুট এলাকাজুড়ে ধ্বংসলীলার স্বাক্ষর রেখে যায়। এটির ফলে মাটির গভীরে ৩৩ থেকে ৫০ মিটার গভীর খাদের সৃষ্টি করে।
গত এক বছরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪১ হাজার ৬৮৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ১৬ হাজার ৮০০ শিশু রয়েছে। এছাড়া নারী রয়েছেন ১১ হাজার ৩৭৮ জন। এমনকি ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে ১৫৮ জন গণমাধ্যমকর্মীও প্রাণ হারিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে। সূত্র: আল-জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/একেএ