ইসলামাবাদের বনি গালা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিকে স্বাগত জানাতে তাদের এই জমায়েত। প্রায় ৯ মাস পর বুশরা বিবি মুক্তি পান।
গত জানুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় উপহারসামগ্রী অবৈধভাবে বিক্রির মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন বুশরা। বুধবার জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর, গতকাল রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল থেকে গাড়ির বহরে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাকে অভিবাদন জানান।
সরকারি তোশাখানা থেকে মূল্যবান উপহার সামগ্রী বিক্রির অভিযোগে ইমরান খান ও বুশরাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইমরান উপহারগুলো বেআইনিভাবে বিক্রি করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৪ কোটি রুপির উপহার যা দুজনের বিরুদ্ধে মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
এছাড়াও, ইমরান ও বুশরার বিয়ের বৈধতা নিয়ে মামলা হয়। যদিও এতে তারা খালাস পান। তবে আবারও নতুন করে তোশাখানা মামলায় বুশরা বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এটা ছিল মূলত একটি মূল্যবান গয়নার সেটের অধিকার নিয়ে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো অভিযোগ তোলে, বুশরা ওই গয়নার সেট বেআইনিভাবে নিজের কাছে রেখে দেন এবং পরে তা ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারে বিক্রি করেন।
ইমরান খান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, সরকার ও ক্ষমতাসীন শক্তি ষড়যন্ত্র করে তাকে আটক রেখেছে।
বুশরা বিবির মুক্তি এমন সময় এলো যখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সাংবিধানিক সংশোধনী পাস হয়েছে। এটা শীর্ষ বিচারপতিদের নিয়োগে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এই সংশোধনীতে সমর্থনের শর্তে বুশরার মুক্তির সমঝোতা হয়েছে।
তবে পিটিআই প্রধান গহর আলী খান এ গুঞ্জন অস্বীকার করেন। তিনি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের যদি চুক্তি করতেই হতো, তাহলে এতদিন ধরে বিবিকে (বুশরা) ও খানকে কারাগারে থাকতে হতো না। খোদার ইচ্ছায় শিগগিরই খানেরও (ইমরান) মুক্তি হবে, কিন্তু তা আইনি প্রক্রিয়াতেই।’
ইমরানের আইনজীবী নাইম হায়দার পানজুথাও ইমরানের মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘একই মামলায় ইমরানকে আটকে রাখা হচ্ছে। তবে অন্য কোনো রায় ঝুলে নেই। ৯ মে সংক্রান্ত কিছু মামলা থাকলেও আমরা আশা করছি শিগগিরই জামিন পেয়ে তিনি মুক্তি পাবেন।’
গত ৯ মে ইমরানকে গ্রেফতারের পর পিটিআই সমর্থকেরা দেশজুড়ে বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ভবনে হামলা চালায়। এরপর প্রায় ১০০ জনকে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ইমরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাইদ জুলফি বুখারি জানিয়েছেন, পিটিআই শিগগিরই ইমরানের মুক্তির জন্য আইনি লড়াই এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।
রাজনীতি বিশ্লেষক জাইগাম খান মনে করেন, রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে বুশরা বিবিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দলের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘দলের অনুগত নেতাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে। তবে ইমরান খানের ওপর বুশরার বিশেষ প্রভাব রয়েছে।’
এদিকে, মুনিব ফারুক নামের আরেক বিশ্লেষক মনে করেন, বুশরা বিবির বিরুদ্ধে মামলাগুলো দুর্বল ছিল। তিনি বলেন, ‘ইমরানের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান এখনো কঠোর। বুশরাকে মুক্তি দিলেও ইমরান খানের কারামুক্তির সম্ভাবনা কম।’
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল