ভারত ও চীনের মধ্যে প্রায় পাঁচ বছর পর উচ্চপর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বুধবার রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠক উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের নতুন আশা জাগিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন সেনাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততা চরমে পৌঁছেছিল। তবে অবশেষে দুই দেশের সর্বোচ্চ নেতারা বৈঠকে মিলিত হয়ে পারস্পরিক আস্থা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি সীমান্ত শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তার মতে, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় দেশের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট শি বিশ্বমঞ্চে ভারত ও চীনের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে জানান, দুটি প্রাচীন সভ্যতার দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
২০২০ সালে সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর ভারত-চীন কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে কয়েকবার আলোচনা করলেও গত সপ্তাহেই প্রকৃত সীমান্তরেখা (এলএসি) নিয়ে একটি বড় সমঝোতা হয়। এতে উভয় পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে, ২০২০ সালের মে মাসের আগের সীমান্ত টহল অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। এর ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই মোদি ও শির মধ্যে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো, যা সম্পর্ক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত বহন করে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বৈঠকে মোদি বলেন, ভারত ও চীনের সম্পর্ক শুধু এই অঞ্চলের জন্য নয়, বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং প্রগতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, পারস্পরিক আস্থা ও মর্যাদা বজায় রেখে সম্পর্ক পরিচালনা করাই উচিত। মোদি আরও বলেন, সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অটুট রাখা উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি দুই দেশের মধ্যে ঐক্যমত্যকেও স্বাগত জানান।
প্রেসিডেন্ট শি জানান, ভারত ও চীন আধুনিকায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব পার করছে এবং এই প্রক্রিয়ায় উভয়ের সম্পর্ক ‘সঠিক পথে’ থাকলে উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। শি আরও বলেন, চীন ও ভারত গ্লোবাল সাউথের প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিকতার বিকাশে ভূমিকা রাখবে।
শি জানান, ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানো এবং মতবিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে মেটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একতা ও শক্তি প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিকতা ও গণতন্ত্রের প্রসারেও ভারত ও চীনের মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক বৈঠকটি ভারত ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল