ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্প ও কমালা হ্যারিসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১৬ দিনে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয় হওয়া সমপরিমাণের (হাফ বিলিয়ন ডলার) অর্থের বিনিময়ে ট্রাম্প এবং কমালার ভোটের ব্যবধানও সমানে সমান। অর্থাৎ ৪৮ শতাংশ করে হয়েছে।
বিগত দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধ-বিবেচনা ক্রমান্বয়ে অপসারিত হচ্ছে নির্বাচনে মার্কিন ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে। আর এমনি পরিস্থিতি দৃশ্যমান হলো নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজের সর্বশেষ জরিপে।
দোদুল্যমান ৭ স্টেটসহ সারা আমেরিকার তালিকাভুক্ত ভোটারের মধ্যে পরিচালিত সর্বশেষ এই জরিপে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকেই ৪৮ শতাংশ অবস্থানে দেখা যাচ্ছে বলে। অক্টোবরের ২০ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত চার দিনব্যাপী চালানো হয় এই জরিপ। এর আগের জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে কমালা কিছুটা এগিয়ে ছিলেন।
অন্যদিকে, ১৯ থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল/ফ্যাবরিজিয়ো লি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস পরিচালিত জরিপে কমালা ৪৬ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৯ শতাংশ, অক্টোবরের ১৬ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত জরিপে কমালা ৪৮ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৫ শতাংশ, অক্টোবরের ১৭ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত মনমাউথ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত জরিপে কমালা ৪৭ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৪ শতাংশ, অক্টোবরের ১৪ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ইউএসএ টুডে/সাফোক ইউনিভার্সিটির জরিপে কমলা ৫০ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৯ শতাংশ, অক্টোবরের ১২ থেকে ১৭ তারিখের মধ্যে অ্যাটলাস ইন্টেল পরিচালিত জরিপে কমলার প্রতি ৪৮ শতাংশ এবং ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন উঠে এসেছে ৫১ শতাংশ আমেরিকানের।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তিন কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৪২০ জন আমেরিকান আগাম ভোটে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ডেমক্র্যাট ৩৯ শতাংশ এবং রিপাবলিকান ভোটার ১৮ শতাংশ অংশ নিয়েছেন। অর্থাৎ আগাম ভোটে (সশরীরে কেন্দ্রে গিয়ে অথবা ডাকযোগে পাঠিয়ে) অংশগ্রহণের মাত্রা রিপাবলিকানদের মধ্যে কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে, জনমত জরিপে দুই প্রার্থীর মধ্যকার ব্যবধান ক্রমান্বয়ে কমে আসায় ডেমোক্র্যাটরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন দোদুল্যমান স্টেট তথা বিজয় নির্ধারণী সাতটি অঙ্গরাজ্যে কমালার ভোট ব্যাংক সুসংহত করতে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং বারাক ওবামা, সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি এবং মিশেলও নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। গুরুতর অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করতে এক সময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল কমালাকে কেন হিমশিম খেতে হচ্ছে? কেন ট্রাম্পকে ভোটারদের কাছে নিন্দিত-ঘৃণিত হিসেবে চিহ্নিত করতে ডেমোক্র্যাটরা ব্যর্থ হচ্ছেন, তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। সবকিছু মিলিয়ে অনুমিত হচ্ছে যে, ৫ নভেম্বরের ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তা কোন জরিপেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এ কারণেই টিভি, প্রিন্ট মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপণের মাত্রাও উভয় পার্টি বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত কত অর্থ ব্যয় করেছেন প্রার্থীরা, তার বিবরণী সাবমিট করা হয়েছে ফেডারেল ইলেকশন কমিশনে। সেখানে দেখা যায়, কমালা এবং ট্রাম্পের মোট ব্যয় হয়েছে অর্ধ বিলিয়ন ডলার।
গত আটটি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ফল পর্যালোচনাকালে দেখা গেছে যে, সাতটিতেই ডেমোক্র্যাটরা জাতীয়ভিত্তিক পপুলার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এর মধ্যে একটিতে বিজয়ী হন রিপাবলিকান প্রার্থী ইলেকট্রোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে। আসন্ন নির্বাচনেও তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে অনেকে মনে করছেন।
এদিকে, গাজা তথা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেন-কমালার প্রতি বিরক্ত মুসলিম ভোটারের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার জর্জিয়ায় কমালার সঙ্গে প্রচারণার সমাবেশে ছিলেন বারাক ওবামা। তারা কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন। গাজা পরিস্থিতিতে কমালার অবস্থানকে সামনের ভোটযুদ্ধে না মেলানোর যুক্তি দেখিয়েছেন অনেকে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প অভিবাসীদের ‘ময়লা-আবর্জনা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখন এক প্রকার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বের জন্য আমরাই তাদের ময়লার জায়গা। এই বক্তব্যে তিনি অভিবাসীদের প্রতি তার কট্টর অবস্থান স্পষ্ট করেন।
এই মন্তব্যে অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের বিতর্কিত অবস্থানেরই প্রতিফলন ঘটে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি প্রচারণায় এই কৌশল ব্যবহার করছেন। ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতারা তার এই বক্তব্যকে বর্ণবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশেষ করে অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর মনোভাবের জন্য।
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত ওপেন করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রকল্পটিকে সেজন্যই বাইডেন-কমালা বহাল রাখেনি বলেনও অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। আবার প্রেসিডেন্ট হলে অভিবাসন নীতিকে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার করছেন ট্রাম্প।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যারিজোনায় বক্তব্যকালে উদারপন্থি গণমাধ্যম ও সংবাদ বিশ্লেষকদেরও বিষোদগার করেছেন ট্রাম্প।
বিডি প্রতিদিন/ইই