রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যৌথভাবে একটি শান্তি চুক্তির পরিকল্পনা তৈরি করছে। এই পরিকল্পনা পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
রবিবার (স্থানীয় সময়) লন্ডনে এক উচ্চপর্যায়ের ইউরোপীয় সম্মেলনের আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টারমার বলেন, গত তিন বছর ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। এখন আমাদের একটি স্থায়ী শান্তির পথে এগোতে হবে।
স্টারমার জানান, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করছে, যাতে যুদ্ধের অবসান ঘটানো যায়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও এই প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব যেন বিভক্ত না হয়, তা নিশ্চিত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় ইউরোপের নেতারা নিজেদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করছেন।
এদিকে শনিবার ব্রিটেনে পৌঁছালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হয়। ব্রিটেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে ২.২৬ বিলিয়ন পাউন্ডের (২.৮৪ বিলিয়ন ডলার) ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছে।
ডাউনিং স্ট্রিটে ৭৫ মিনিটের গোপন বৈঠকে জেলেনস্কি ও স্টারমার যুদ্ধের সমাপ্তি এবং ন্যায্য শান্তি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন।
এক বিবৃতিতে জেলেনস্কির দফতর জানায়, এমন একটি শান্তিচুক্তি চাই, যাতে রাশিয়া অস্ত্রবিরতি ব্যবহার করে আবার আক্রমণ চালানোর সুযোগ না পায়।
হোয়াইট হাউসে বিতর্ক ও ট্রাম্পের অবস্থান
এর আগে, ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে বৈঠকে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি, বরং বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছেন।
জেলেনস্কি পাল্টা বক্তব্য দিয়ে বলেন, পুতিনের সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না।
নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প ইউক্রেন ইস্যুতে তার অবস্থান বদলাচ্ছেন, যা ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তিনি নিজেকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন এবং কিয়েভ ও ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি মস্কোর সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছেন।
কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও ভবিষ্যৎ
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তিনি ভুক্তভোগী ও আক্রমণকারীর ভূমিকা বদলে দিচ্ছেন। এটি এক নতুন লজ্জাজনক অধ্যায়ের শুরু। এদিকে, ক্রেমলিন জেলেনস্কির মার্কিন সফরকে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছে। রাশিয়ার প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার পররাষ্ট্রনীতির নতুন কাঠামো গড়ে তুলছে, যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কীভাবে নির্ধারিত হবে, তা নির্ভর করছে পশ্চিমা বিশ্ব কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে তার ওপর। যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সের উদ্যোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল