কলম্বিয়ায় এক নির্বাচনী প্রচার অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ডানপন্থী সিনেটর মিগুয়েল উরিবে। শনিবার রাজধানী বোগোটার একটি পার্কে ঘটনাটি ঘটে। ৩৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দেশটির ডেমোক্রেটিক সেন্টার পার্টির সদস্য এবং ২০২৬ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
উরিবের স্ত্রী মারিয়া ক্লাউদিয়া তার স্বামীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, উরিবের মাথা থেকে রক্ত ঝরছে এবং আশপাশের মানুষ তাকে সাহায্য করছে।
সিনেটরের ওপর হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বোগোটার সান্তা ফে হাসপাতালের সামনে অনেক মানুষ প্রার্থনায় মোমবাতি জ্বালিয়ে শোক পালন করছেন।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই ক্ষত শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা জাতির হৃদয়ে আঘাত।’ প্রেসিডেন্ট হামলার পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলায় ১৫ বছরের নিচে এক কিশোরকে গ্লক পিস্তলসহ আটক করা হয়েছে। তবে এককভাবে সে এই হামলা করেছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলার পেছনের মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানান, তিনি হাসপাতালে গিয়ে আহত সিনেটরের চিকিৎসার খোঁজ নিয়েছেন এবং হামলার ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরকার ইতোমধ্যে এই হামলার বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এই সহিংসতার পেছনে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের উসকানিমূলক ভাষা দায়ী।’
উল্লেখ্য, মিগুয়েল উরিবে একটি প্রভাবশালী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তার মা ডায়ানা তুরবে ছিলেন সাংবাদিক যাকে ১৯৯০ সালে মাদকসম্রাট পাবলো এসকোবারের অনুসারীরা অপহরণ করে। ১৯৯১ সালে উদ্ধার অভিযানের সময় তিনি নিহত হন।
কলম্বিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক সহিংসতা চলে আসছে। বামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী, ডানপন্থী সশস্ত্র দল এবং সরকার–এই তিন পক্ষের সংঘর্ষে দেশটি প্রায়ই অস্থির হয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর নতুন করে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সরকার জানিয়েছে, নিরাপত্তা ত্রুটি কোথায় ছিল তা নিয়েও তদন্ত করা হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল