রবিবার, ২২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

শ্রীলঙ্কায় পেট্রোল গ্যাসের লাইনে হাজারো মানুষ

জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার

শ্রীলঙ্কায় পেট্রোল গ্যাসের লাইনে হাজারো মানুষ

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় -এএফপি

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় খাদ্য ঘাটতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করার পর দ্বীপ দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে পেট্রোল ও রান্নার গ্যাসের জন্য অপেক্ষারতদের সারিতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।

বাসিন্দাদের জ্বালানি মজুদের চেষ্টায় নয় লাখ মানুষের শহর কলম্বোর অনেক জায়গায় শুক্রবার দীর্ঘ লাইন  ছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিকে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট এবং সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলনের মুখে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। জরুরি অবস্থা জারির দুই সপ্তাহ পর গতকাল থেকে দেশটির সরকার তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জ্বালানির সিংহভাগই শ্রীলঙ্কা আমদানি করে; যে কারণে বিদেশি মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ার পর এর তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

‘পাঁচ শর মতো মানুষ থাকলেও কেবল দুই শর মতো সিলিন্ডার বিতরণ করা হয়েছে’, বলেছেন পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য রান্নার গ্যাস সংগ্রহ করতে তৃতীয় দিনের মতো লাইনে দাঁড়ানো খণ্ডকালীন গাড়িচালক মোহাম্মদ শাজলি। তার সঙ্গে একই লাইনে আরও কয়েক শ লোক দাঁড়ানো, যাদের সঙ্গে খালি সিলিন্ডার। রান্নার গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রে যখনই একটি ট্রাক নতুন সরবরাহ নিয়ে পৌঁছাচ্ছে, তখনই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে থাকা সৈন্যদের ওই ট্রাককে পাহারা দিতে এবং লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনকে হাততালি দিতে দেখা যাচ্ছে। ‘গ্যাস ছাড়া, কেরোসিন তেল ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না। শেষ বিকল্প কী? খাদ্য ছাড়া আমরা মারা যাব। এটিই ঘটবে, আমি শতভাগ নিশ্চিত’, বলেছেন শাজলি। ভারত ও চীন উভয়ই যাকে নিজের প্রভাববলয়ে রাখতে চায়, সেই পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কা এখন বিদেশি মুদ্রা, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছে। দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও নেতিয়ে পড়েছে। গণপরিবহন নেই বললেই চলে, রাস্তায় অন্য গাড়িও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না; কারণ পেট্রোলের অভাবে বেশিরভাগ গাড়ি চলছে না, মানুষও ঘরেই থাকছেন। এসবের পাশাপাশি দ্বীপ দেশটিতে খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। দুই কোটি ২০ লাখ জনগণের খাদ্য চাহিদা মেটাতে ও উৎপাদন বাড়াতে তিনি পরবর্তী রোপণ মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত সার কেনারও আশ্বাস দিয়েছেন। গত বছরের এপ্রিলে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের রাসায়নিক সার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত দেশটির ফসলের পরিমাণ অনেকখানি কমিয়েছিল। সরকার পরে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও দেশটি এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো সার আমদানি করেনি।

জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার : নজিরবিহীন অর্থনৈতিক  সংকট এবং সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলনের মুখে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নিয়েছে  শ্রীলঙ্কার সরকার। জরুরি অবস্থা জারির দুই সপ্তাহ পর গতকাল থেকে দেশটির সরকার তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। -রয়টার্স

বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে গত ৬ মে মধ্যরাত থেকে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশজুড়ে শুরু হওয়া ক্রমবর্ধমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাঝে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়বিষয়ক সচিবালয়ের বরাত দিয়ে হিরু নিউজ বলেছে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দ্বীপরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে দেশটির পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটকের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। অর্থনৈতিক সংকটে ভেঙে পড়া শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী কলম্বো এবং অন্যান্য শহরে টানা আন্দোলন করে আসছেন দেশটির ক্ষুব্ধ জনগণ। গত ৯ মে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার সদস্য কলম্বোর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সহিংস হামলা চালায়। এতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সাধারণ জনতার সংঘর্ষে অন্তত নয়জন নিহত ও আরও দুই শতাধিক আহত হন। পরে হামলার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে অগ্নিসংযোগ করে। সেই সময় শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অন্তত ৭০ জন নেতার বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয় দেশটির সাধারণ জনগণ। এ সহিংসতার পরপরই দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বড় ভাই ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। রয়টার্স

সর্বশেষ খবর