বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইউরোপকে ফের গ্যাস পরীক্ষায় ফেলল রাশিয়া

ইউরোপকে ফের গ্যাস পরীক্ষায় ফেলল রাশিয়া

ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়াকে নানাভাবে শাস্তি দিতে চেয়েছে ইউরোপ। কিন্তু পাল্টা সমস্যায় পড়েছে গোটা ইউরোপ। শীত আসার এখনো ঢের বাকি। কিন্তু সেই শীতকে এবার কীভাবে মোকাবিলা করবে তা নিয়ে ঘাম ছুটছে। কারণ শীতে বাড়ি ও যানবাহন গরম রাখার জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন হয় তার প্রধান সরবরাহ হয় রাশিয়া থেকে। এবার রাশিয়া থেকে আশানুরূপ সেই জ্বালানি পাবে না ইউরোপ। সেই ধকল সইতে হবে গোটা ইউরোপকে। এই দুশ্চিন্তার মধ্যে ইউরোপে ফের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম বলছে, গ্যাস পাইপলাইন মেরামত কাজের কারণে সরবরাহ বন্ধ থাকবে। স্থানীয় সময় বুধবার ভোরে নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনের মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের। সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, এটি সাময়িক অসুবিধা। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সুবিধার্থে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনো ত্রুটি পাওয়া না গেলে, তিন দিন পর আবারও আগের মাত্রাতেই সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। জুলাইয়ের শেষ থেকে পাইপলাইনটির সরবরাহ ক্ষমতার ২০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করছে রাশিয়া। ত্রুটি না পাওয়া সাপেক্ষে এই মাত্রাতেই গ্যাস দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে গ্যাজপ্রম। তবে জার্মান সরকার এবং দেশটির জ্বালানি নির্বাহীরা এটিকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে ও মাত্রায় আবারও সরবরাহ শুরু হয় কি না তা পর্বেক্ষণ করবে জ্বালানি বাজার। গেল জুলাইয়েও পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলে জার্মানিতে ১০ দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল রাশিয়া।

অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো জার্মানিও শীতের আগেই প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ করতে চাইছে। তবে রাশিয়া থেকে বারবার সরবরাহ বন্ধ, উদ্বেগ তৈরি করেছে দেশটিতে। জার্মান নীতিনির্ধারকদের অনুমান, গ্যাস মজুদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করতেই রুশ সরকার রক্ষণাবেক্ষণের নামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখছে জার্মানিতে। এদিকে, রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ইউরোপজুড়ে। এতে রেকর্ডমাত্রায় পৌঁছেছে গ্যাসের দাম।

তবে শুধু জার্মানিকেই টার্গেট করেনি রাশিয়া। মঙ্গলবার ফরাসি কোম্পানি এনজি বলেছে, গ্যাজপ্রম তাদেরকে জানিয়েছে, একটি চুক্তি বিবাদের জের ধরে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়েছে রাশিয়া।

ইউরোপীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, রাশিয়া গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়াসেই এমনটা করছে। ইতোমধ্যে গ্যাসের দাম প্রায় ৪০০ শতাংশ বেড়েছে।

ইউরোপের দেশগুলোতে আগামী কয়েক শীতে গ্যাসের সংকট থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম না কমলে আগামী ৫ বা ১০টি শীতকাল ইউরোপের জন্য সংকটময় হতে পারে। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটে পড়েছে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ। ইউরোপীয়রা তাদের আয়ের এক-দশমাংশ জ্বালানিতে ব্যয় করছে।

এদিকে ফ্রান্সের জ্বালানিমন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ার-রানাচার ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে বলেছেন, ‘যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে নিজেদের গ্যাস সম্পদকে ব্যবহার করছে রাশিয়া; সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হতে পারে, এমন খারাপ পরিস্থিতির জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

সর্বশেষ খবর