শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ইরানে দমন-পীড়ন

তথ্যানুসন্ধান করবে জাতিসংঘ মিশন

তথ্যানুসন্ধান করবে জাতিসংঘ মিশন

ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩০০ পেরিয়ে গেছে। রয়টার্স জানায়, ইরানের পরিস্থিতিকে ‘খুবই গুরুতর’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন। সংস্থাটির দাবি, বিক্ষোভকারীদের ওপর ইরান কর্তৃপক্ষের কঠোর দমন নীতির কারণেই এত সংখ্যক মানুষ মারা গেছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিল ইরানে সরকার বিরোধী আন্দোলনে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য একটি তথ্যানুসন্ধান মিশন গঠনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন স্বাধীন এই তদন্তের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে এবং দেশটির নারীদের সমর্থন করে শক্ত বার্তা দেওয়া হবে।

জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ভলকার টার্ক সংকটের জন্য সতর্ক করে বলেন, গত নয় সপ্তাহে প্রায় ১৪ হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে এবং ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। দেশটিতে মাহসা আমিনি নামে এক তরুণী নিরাপত্তা হেফাজতে মারা যাওয়ার প্রতিবাদে নারীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আন্দোলন দেশটির অন্তত ১৫০ শহর ও ১৪০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনকে এখন বিবেচনা করা হচ্ছে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে।

তবে ইরানের এসব ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য যে তথ্যানুসন্ধান মিশন গঠনের জন্য ভোট হয়েছে তার পক্ষে ২৫ দেশ ভোট দিলেও ১৬টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল আর ছয়টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। শেষ মুহূর্তে চীনের পক্ষ থেকে একটি সংশোধনী প্রস্তাব এলেও সেটি গৃহীত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন ইরানের বিক্ষোভ সহিংস পন্থায় দমনের জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করতে এটি সহায়তা করবে। তবে বিবিসির জেনেভা সংবাদদাতা বলছেন যে এ ধরনের কমিটিকে ইরান সম্ভবত সেখানে কাজ করতে দেবে না। যদিও দূর থেকেই সিরিয়া ও মিয়ানমারে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছিল জাতিসংঘ। প্রস্তাবটির ওপর ভোটের আগে টার্ক বলেছেন ইরানের অভ্যন্তরীণ তদন্ত আন্তর্জাতিক মানদন্ড পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই মানবাধিকার কাউন্সিল স্বাধীন তদন্তকে সমর্থন দিচ্ছে। তিনি বলেন, শক্তির অপ্রয়োজনীয় ও নির্বিচার প্রয়োগের সমাপ্তি হওয়া উচিত। ‘আমরা এখন একটি পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার সংকটের মুখোমুখি।’ বিক্ষোভ দমনে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির অবজ্ঞার পাশাপাশি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করায় তিনি এ সমালোচনা করেন।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্সিলের সভায় বলেছেন এখনই সব প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্তরা কখনো ন্যায় বিচার পাবে না।

কিন্তু ইরানের প্রতিনিধি খাদিজাহ কারিমি বলেছেন পশ্চিমা দেশগুলোর নৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মানবাধিকারকে ব্যবহারের বিষয়টি লজ্জার।’ চীনের রাষ্ট্রদূতও মানবাধিকারকে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

ওদিকে বৃহস্পতিবার ইরানের আধা সরকারি একটি মিডিয়া খবর দিয়েছে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে দেশটির ফুটবলার ভরিয়া গফৌরিকে আটক করা হয়েছে। ইরান জাতীয় দলের সাবেক এই খেলোয়াড় সরকারের সমালোচনা ও বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছিলেন বলেও খবরে এসেছে।

সর্বশেষ খবর