গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিহত্যা (জেনোসাইড) চালাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। যদিও ইসরায়েলি নেতারা বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
অ্যামনেস্টি প্রধান আনিয়েস কালামার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মাসের পর মাস ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে মানবাধিকার ও মর্যাদার অযোগ্য একটি অধম গোষ্ঠী হিসেবে আচরণ করেছে, তাদের শারীরিকভাবে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রদর্শন করেছে।’ তিনি বলেন, তাদের প্রতিবেদনের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জেগে ওঠা উচিত।’ এটা জাতিহত্যা ও গণহত্যা। অ্যামনেস্টি প্রধানের আহ্বান এটা অবশ্যই এখনই থামাতে হবে।
১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে উল্লিখিত জেনোসাইডের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘একটি জাতি, জাতিগত গোষ্ঠী, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে করা কর্মকান্ড।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা উপত্যকায় আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। কাউকে কাউকে ১০ বারও বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর কালামার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। ছয় মাস ধরে গভীর অনুসন্ধান ও মনোযোগের সঙ্গে গবেষণাটি করার পর আমাদের মনে কোনো ধরনের, এমনকি বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই।’ অ্যামনেস্টি বলেছে, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে নিষিদ্ধ হওয়া পাঁচটি কর্মকান্ডের মধ্যে অন্তত তিনটি করেছে ইসরায়েল ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। অ্যামনেস্টির ৩০০ পাতার প্রতিবেদনে ইসরায়েলি নির্মমতার ঘটনাগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে ‘হামাসের কোনো উপস্থিতি ছিল না।’ গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ বছরের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় চালানো ১৫টি বিমান হামলার উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি বলেছে, এসব হামলা ‘মিলিটারি অবজেক্টিভ’কে লক্ষ্য করে করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এসব হামলায় ১৪১ শিশুসহ ৩৩৪ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মৃত্যু এবং শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ট্রমার পাশাপাশি গাজাবাসী ‘অপুষ্টি, ক্ষুধা ও রোগের’ শিকার এবং ‘ধীরে মৃত্যুর’ সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
যেসব দেশ ইসরায়েলকে অস্ত্র দিচ্ছে তারা কনভেনশনের আওতায় গণহত্যা প্রতিরোধে তাদের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার লঙ্ঘন করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন কালামার। এএফপি, বিবিসি