ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরায়েল বুধবার যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়। এরপর কাতারের আমির আনুষ্ঠানিক এ চুক্তির ঘোষণা দেন। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হওয়ার পরও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছেন দখলদার সেনারা। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা গতকাল জানিয়েছে, কাতারের আমিরের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৮০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন।
আলজাজিরা অ্যারাবিকের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গাজা সিটির ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ের কাছের একটি ভবনে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই হামলায় নিহত হন ১৮ ফিলিস্তিনি। অপরদিকে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গাজা সিটির রেদওয়ান এলাকা থেকে ১২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন তারা। এ ছাড়া মধ্য গাজার বুরুজি ক্যাম্পের কারাজ এলাকায় ড্রোন হামলায় নিহত হন আরও পাঁচজন। নিহতরা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শোনার পর গাজার সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তবে কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কায় বাসিন্দারা আবারও নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরে যান। আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ মধ্য গাজার দের এল-বালাহ থেকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা যেহেতু রবিবারের আগে শুরু হবে না, তাই গাজার মানুষের শঙ্কা ইসরায়েলিরা শেষ মুহূর্তে হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি ড্রোন ও কামান হামলা বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে ১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার খবরে উল্লাসে ফেটে পড়লেন সর্বস্ব হারানো গাজার ফিলিস্তিনিরা। বাঁধ ভাঙা উল্লাস করতে দেখা গেছে তাদের। বুধবার সন্ধ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হামাস ও দখলদার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হয়।
যুদ্ধবিরতির খবরটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ ও অন্যান্য এলাকায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। আনন্দে তারা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেককে মুঠোফোনে ছবি তুলতে দেখা যায়।
গাজা শহর থেকে ভূখন্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নুসাইরাত ক্যাম্পে বাস্তুচ্যুত ৪৫ বছর বয়সি রান্ডা সামেহ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ দুঃস্বপ্ন অবশেষে শেষ হচ্ছে। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি, আমরা সবকিছু হারিয়েছি।’ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে রবিবার থেকে। ঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে মূল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আলাদা বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধবিরতির কথা জানিয়েছে। যুদ্ধে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির প্রায় প্রতিটি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। অনেক পরিবার নির্বংশ হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ঘরবাড়ি, স্কুল-হাসপাতাল এবং রাস্তা-ঘাটসহ নানা অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আলজাজিরা