ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বড় ধরনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ হামলায় দেশটির রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সরকারি স্থাপনা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সিভিরিদেঙ্কো বলেন, ‘প্রথমবারের মতো সরকারি ভবন শত্রুর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ভবনটির ছাদ ও ওপরের তলা রয়েছে। আমরা ভবনগুলো পুনর্র্নির্মাণ করব, কিন্তু হারানো জীবন আর ফেরানো যাবে না।’ স্থানীয় সময় গতকাল ভোরে চালানো এ হামলায় ৮১০টি ড্রোন, চারটি ব্যালাস্টিক ও ৯টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী। এর মধ্যে অধিকাংশ ড্রোন আকাশ প্রতিরক্ষা দিয়ে ভূপাতিত করা হলেও ৫৪টি ড্রোন ও ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র দেশজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলেও বিমানবাহিনী জানায়। আর রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক কমপ্লেক্স ও পরিবহন অবকাঠামো লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরুর পর ইউক্রেনে এটাই আকাশপথে সবচেয়ে বড় হামলা। এ হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছেন বলে সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। অপরদিকে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা ইস্যুতে প্যারিসে সম্প্রতি যেসব বিষয়ে মিত্র দেশগুলো সম্মত হয়েছে সেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। রাশিয়ার ‘বেপরোয়া হামলার’ পর টেলিগ্রামে এক পোস্টে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে, রাশিয়ার এ হামলা বিশেষ করে কিয়েভে সরকারি ভবনে প্রথমবারের মতো হামলায় নিজেদের নিন্দা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি সরকারি স্থাপনায় রুশ হামলায় উদ্বিগ্ন। প্রেসিডেন্ট পুতিন যে শান্তির ব্যাপারে সিরিয়াস নন তা এ হামলার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় বলেও বিবৃতিতে জানান তিনি।
অপরদিকে, রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে স্থানীয় সময় শনিবার ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অঞ্চলটির গভর্নর। কিয়েভের হামলায় অঞ্চলটির বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর, প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি। আর রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনের তরফে ছোড়া অন্তত ৬৯টি ড্রোন ঠেকিয়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এতদিন পর্যন্ত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে হামলা করা থেকে বিরত ছিল রাশিয়া। এবার মন্ত্রিপরিষদ ভবনে হামলা নতুন ধাক্কা হয়ে এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি প্রতীকী আঘাত। এর মাধ্যমে রাশিয়া স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের শান্তি নিয়ে কথাবার্তা আসলে কেবল লোক দেখানো।
রাশিয়ার তরফে সর্ববৃহৎ এ হামলা ইউক্রেনের ৩৭টি স্থানে আঘাত হানে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে অনেক আগে থেকেই কূটনীতির সূচনা হতে পারত, এটি একটি ইচ্ছাকৃত অপরাধ এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা।’ সূত্র : বিবিসি, সিএনএন।