ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মাহমুদ আব্বাস বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তাঁকে সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়ছে আল জাজিরা।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের তৃতীয় দিনের শুরুতে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা, ধ্বংস, অনাহার ও বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল কেবল আগ্রাসন চালাচ্ছে না; এটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যা নথিভুক্ত ও পর্যবেক্ষিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিবেক ও ইতিহাসের পাতায় এটি ২০ ও ২১ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক ট্র্যাজেডিগুলোর একটি অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে।’
এদিকে ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আব্বাস তাঁর ভাষণে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র করার আহ্বান জানিয়েছিলেন; যা ইসরায়েলের দাবির প্রতিধ্বনি বলে হামাস মন্তব্য করেছে। প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি এ মন্তব্যকে ‘গভীরভাবে দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বর্ণনা করেছে।
বুধবার প্রকাশিত বিবৃতিতে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জত আল-রিশক বলেন, ‘নিউইয়র্কে ফিলিস্তিনবিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলনে পিএপ্রধানের মন্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’
আল-রিশক উল্লেখ করেন, ‘ইসরায়েল যখন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা ও পশ্চিম তীরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় আব্বাস সশস্ত্র প্রতিরোধের নিন্দা করে কার্যত ইসরায়েলের দাবিগুলোই সমর্থন করেছেন।’ জ্যেষ্ঠ এই হামাস কর্মকর্তা আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ যখন ইসরায়েলি আগ্রাসন সহ্য করছে, তখন এ ধরনের বিবৃতি খুবই হতাশাজনক।’ আল-রিশক গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড শাসন করার ক্ষেত্রে হামাসের যে কোনো ভবিষ্যৎ ভূমিকা খারিজ করে দেওয়ার আব্বাসের সিদ্ধান্তকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি একে ‘বাহ্যিক চাপ ও নির্দেশনার’ কাছে নতিস্বীকার এবং জাতীয় সংলাপের চুক্তিগুলোর লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে আব্বাসের এ অবস্থান ফিলিস্তিনিদের নিজেদের নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণের মৌলিক অধিকার অস্বীকার এবং জাতীয় সংলাপের পূর্ববর্তী চুক্তি ভঙ্গ করে। আল-রিশক জোর দিয়ে বলেন, ‘এসব ছাড় ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর সংগ্রাম দুর্বল করার একটি বিপজ্জনক প্রবণতা তুলে ধরে।’
আল-রিশক আরও উল্লেখ করেন, ‘আব্বাসকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ব্যক্তিগতভাবে জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদানে বাধা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি এমন মন্তব্য করেছেন, যখন কি না তেল আবিব প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করছে। বসতি সম্প্রসারণও চালিয়ে যাচ্ছে।’ হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পিএপ্রধানের প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সমন্বয় ত্যাগ করার, বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়ার এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্যে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আল-রিশক বলেন, ‘শুধু প্রকৃত ঐক্য এবং সম্মিলিত প্রতিরোধের মাধ্যমেই ফিলিস্তিনিরা স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং আল-কুদসকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে।’ প্রেস টিভি