১৭ জুন, ২০২১ ১৩:২১

আদর্শ জাতি গঠনে মায়ের ভূমিকা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি


আদর্শ জাতি গঠনে মায়ের ভূমিকা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ এই পৃথিবীর অগ্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীর রয়েছে যথেষ্ট অবদান। বাংলা অভিধানে ক্ষুদ্রতম একটি শব্দ ‘মা’। মা শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কত মায়া, মমতা, কত আবেগ, কত প্রেরণা, কত অর্জন। একজন আদর্শ মা-ই হতে পারেন আদর্শ জাতি গঠনের প্রেরণা। একজন সুশিক্ষিত মায়ের উপস্থিতি সন্তানের জীবনে পূর্ণতা আনে। একজন আদর্শ মা-ই পারেন সন্তানের সুপ্ত মনোবৃত্তির বিকাশ ঘটিয়ে একটি কলহমুক্ত পরিবার, অপরাধবিহীন সমাজ এবং দুর্নীতিমুক্ত আদর্শ জাতি উপহার দিতে। তাই কোরআন এবং হাদিসে আদর্শ মা গঠন ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহান প্রভু কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন, ‘সৎ নারী তো তারা, যারা অনুগতা এবং আল্লাহ যা সংরক্ষণযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার রক্ষাকারিণী হয়।’ সুরা নিসা, আয়াত ৩৪। বিয়ের একটি মহান উদ্দেশ্য হলো সুসন্তান লাভ। বিয়ের অন্যতম লক্ষ্য হলো দুজনে মিলে একটি শান্তির সংসার গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও মনের মিলের ওপর নির্ভর করে। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রিয় নবী (সা.) নির্দেশ করেন, ‘তোমরা এমন মেয়েকে বিয়ে কর, যাদের হৃদয়টা ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে ভরপুর থাকে এবং যে বংশের মেয়েদের বাচ্চা বেশি হয়। কেননা আমি কিয়ামত দিবসে তোমাদের আধিক্য নিয়ে অন্য উম্মতের সঙ্গে গর্ব করব।’ আবু দাউদ।

সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, রমণীকে তার সম্পদ, আভিজাত্য, রূপ-সৌন্দর্য ও দীন-ধর্ম দেখে বিয়ে করা হয়। তবে তুমি ধার্মিকতাকে পেয়ে সফল হও। তোমার জীবন ধন্য হোক।’ বুখারি, মুসলিম। অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমাদের কাছে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার ধার্মিকতা ও আখলাক চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয় তার সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন কর। অন্যথায় পৃথিবীতে মারাত্মক নৈরাজ্য-নৃশংসতা এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’ তিরমিজি।

জীবনসঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার সম্পদ, আভিজাত্য, রূপ-সৌন্দর্য দেখা যুক্তিসংগত বিষয়। কিন্তু তার আচার-আচরণ, অভ্যাস, পরিবেশ ও মানসিকতা যদি আদর্শ না হয় তাকে নিয়ে সুদীর্ঘ জীবন শান্তিপূর্ণভাবে অতিক্রম করার আশা করা যায় না। সুসন্তান লাভ ও সন্তানকে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে গড়ে তোলা তার মাধ্যমে কল্পনা করা যায় না। ধার্মিকতা একটি ব্যাপক বিষয়। ইসলাম ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম। ইসলামী আদর্শে যার জীবন গড়ে উঠবে তার মধ্যে ধার্মিকতা আছে বলা যাবে। সন্তানের মা যদি ধার্মিক হয় সন্তান ধার্মিক ও আদর্শভাবে গড়ে উঠবে। গোটা পরিবার হবে শান্তিময়। সমগ্র জাতির অনাগত ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে। সফল হবে। হেসে উঠবে আনন্দের ঝলমলে প্রভাত। বর্তমান সমাজে পারিবারিক কলহ ও স্বামী-স্ত্রী বিবাদ নিত্যদিনের খবর। পরকীয়া ও অনৈতিক আচরণের জেরে সর্বত্র সংসার ভঙ্গ হচ্ছে। ঘুমের মধ্যে নিজ স্বামীকে টুকরা টুকরা করে বস্তাবন্দী করতে নারীরা দ্বিধা করছে না। স্বপ্নের ভবিষ্যৎ সোনার সন্তান আজ নানামুখী অপরাধ ও খুন-সন্ত্রাসে জড়িয়ে যাচ্ছে। সন্তানের মোবাইল ও মাদকাসক্তি, অপরাধপ্রবণতা এবং কিশোর গ্যাং ইত্যাদি দুর্বৃত্ততা মা-বাবার স্বপ্ন বিলীন করে দিচ্ছে। ভাবিয়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সমগ্র জাতিকে। এ পরিসরে একটি শান্তিময় পরিবার ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের আন্দোলন এবং উন্নত জাতি গঠনে আদর্শ মা নির্বাচনের বিকল্প নেই।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর