২৩ মে, ২০২৪ ১০:২৭

মহান আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতা

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ

মহান আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতা

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর এই বিশাল জগতে কত যে অকল্পনীয় ও বৈচিত্র্যময় বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তা ভাবতেই অন্তর বিস্ময়ে শিউরে ওঠে। অতিশয় ক্ষুদ্র অণু পরিমাণ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী, বড় বড় প্রাণী এবং অতি বড় নক্ষত্র গ্যালাক্সিতে ভরপুর এই মহাবিশ্ব। আল্লাহর সৃষ্টি, বিশেষ করে বিশ্বজগত্ মানুষের জন্য চিরবিস্ময়ের বস্তু। বিজ্ঞানীরা মহাকাশ সম্পর্কে বছরের পর বছর গবেষণা করে বিস্ময়কর অজানা অনেক তথ্য আবিষ্কার করেছেন।

মহাকাশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য কোরআনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃজনে এবং দিন-রাত আবর্তনে সেসব জ্ঞানীদের জন্য আছে নিদর্শন, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে আর বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, অনন্তর আমাদের দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দিন।’(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০-১৯১)

আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার জন্য তাঁর সৃষ্টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, পৌঁছতে হবে চিন্তার সর্বোচ্চ চূড়ায়।

এখানে তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টির কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—
সৌরজগত্ : মহাবিশ্বের দিকে তাকালে প্রথমে যে বিস্ময়কর জগত্ দেখতে পাই, তাহলো সৌরজগত্। সূর্য ও তার গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে গঠিত আমাদের এই সৌরজগত্। সূর্য একটি সাধারণ নক্ষত্র। এ পর্যন্ত সূর্যের ৯টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে।

সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্যের অবস্থান। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৩ লাখ গুণ বড় এবং এর ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে তিন লাখ ৩৩ হাজার গুণ বেশি। সূর্যের ব্যাস আট লাখ ৮৫ হাজার ৪৬০ মাইল। সূর্যের মতো হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে যে জগত্ তাকে বলা হয় তারকাজগত্ বা গ্যালাক্সি। সূর্য যে গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত তার নাম মিল্কিওয়ে।

সূর্য তার কক্ষপথ থেকে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ মাইল বেগে অর্থাত্ প্রতি ঘণ্টায় সাত লাখ ২০ হাজার মাইল বেগে ২০ কোটি বছরে একবার ঘুরে আসে।
গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রজগত্ : হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে একটি গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রজগত্ গঠিত। এক একটি গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র রয়েছে ১০ হাজার কোটি থেকে ৩০ হাজার কোটি পর্যন্ত। আবার নক্ষত্রগুলো একটি থেকে অপরটি অনেক দূরে অবস্থিত এবং নিজ নিজ কক্ষপথে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে অবিরত ঘূর্ণায়মান। বিজ্ঞানীদের হিসাবে এক নক্ষত্র থেকে অপর নক্ষত্রের গড় দূরত্ব ২.৫৫ আলোকবর্ষ বা প্রায় ১৫ লাখ কোটি মাইল। এক আলোকবর্ষ বলতে আলো প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে এক বছরে যত মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে তা বোঝায় আর তা হলো ৫.৮৭ লাখ কোটি মাইল।

মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা কত তা সঠিকভাবে এখনো জানা যায়নি এবং যাবেও না। তবে অতিকায় শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে যা জানা যায়, এতে দৃশ্যমান জ্যোতিষ্কের ভর সমষ্টি অদৃশ্য পদার্থের ভরের তুলনায় মাত্র শতকরা ১০ ভাগ বাকি ৯০ ভাগ পড়ে আছে মানুষের দৃষ্টির বাইরে। আর দৃশ্যমান গ্যালাক্সির সংখ্যা ১০০ কোটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বের গ্যালাক্সির সংখ্যা ২০ হাজার কোটি। সে হিসাবে মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা ২০ হাজার কোটি গুণন ১০ হাজার কোটি।

এ থেকে অনুমান করা যায়, মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা নিরূপণ করা কত জটিল। আসলে দুনিয়ার সব সমুদ্রের বেলাভূমিতে যতগুলো বালুকণা আছে, আকাশমণ্ডলীতে অবস্থিত নক্ষত্রগুলো ততসংখ্যক কিংবা তার চেয়েও অনেক বেশি। এই মহাবিশ্বকে যত জানতে চেষ্টা করা হয় কৌতূহলতা ততই বেড়ে যায়। বিস্ময় আর বিহ্বলতার মধ্যে প্রশ্ন জাগে—এই মহাবিশ্বের কিংবা বিস্ময়কর মহাসৃষ্টির স্রষ্টার বিশালতা কেমন?

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর