আতিথেয়তা ও বদান্যতা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণ। মহান আল্লাহ এই গুণটি ভীষণ পছন্দ করেন। মহান আল্লাহর প্রেরিত নবীরা অতিথির সমাদর করতেন। যার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে রয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার কাছে ইবরাহিমের সম্মানিত মেহমানদের খবর পৌঁছেছে কি? যখন তারা তার কাছে এলো এবং বলল—সালাম, জবাবে সেও বলল—সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর সে দ্রুত চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটাতাজা গোবাছুর (ভাজা) নিয়ে এলো।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২৪-২৬)
আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-ও অতিথি আপ্যায়নে বেশ যত্নবান ছিলেন।
তিনি তাঁর উম্মতদের অতিথিদের সমাদরের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘...যে ব্যক্তি আল্লাহর আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের সমাদর করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৭)
নবীজির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে অবিশ্বাসীরা ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। আরবের মুহারিব গোত্র খুবই উগ্র ছিল।
কট্টর ইসলামবিরোধী ছিল। ইসলামের মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে যখন মানুষ দলে দলে মদিনায় আসতে লাগল, তখন মুহারিব গোত্রেরও ১০ জন লোক মদিনায় এলো। রাসুল (সা.) তাদের অভ্যর্থনা-আপ্যায়নের জন্য বেলাল (রা.)-কে দায়িত্ব দেন। সকাল-বিকাল তাদের আহারের সুব্যবস্থা করেন। এতে তারা মুগ্ধ-বিস্মিত হলো এবং ইসলাম গ্রহণ করে নিজ দেশে ফিরে গেল। (আসাহহুস সিয়ার, পৃষ্ঠা-৪৪৪)
অতিথিপরায়ণতার সঙ্গে বদান্যতার যোগসূত্র রয়েছে। যাদের মধ্যে বদান্যতার গুণ আছে, যারা মানুষের জন্য খরচ করার মানসিকতা রাখে, তারাই বিশেষত অতিথিপরায়ণ হয়। আল্লাহর উদ্দেশে মানুষের জন্য খরচ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এর দ্বারা সম্পদে বরকত হয়, পরকালেও এর প্রতিদান বহুগুণে পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্যবীজ, তা থেকে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে (উৎপন্ন হলো) এক শ শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন বর্ধিত করে দেন; বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৬১)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একটি দিনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দিনার গোলাম আজাদ করার জন্য এবং একটি দিনার মিসকিনদের দান করলে এবং আরেকটি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করলে। এর মধ্যে (সওয়াবের দিক থেকে) ওই দিনারটিই উত্তম, যা তুমি পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করলে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২০১)
মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবিদের (সাধ্যমতো) অন্যের জন্য খরচ করার ব্যাপারে এত বেশি গুরুত্বারোপ করতেন যে তাদের ধারণা হতো, অতিরিক্ত সম্পদের মধ্যে কারো কোনো অধিকার নেই। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি বাহনে আরোহণ করে তাঁর কাছে এলো এবং ডান দিকে ও বাঁ দিকে তাকাতে লাগল। তখন রাসুল (সা.) বলেন, যার কাছে আরোহণের কোনো অতিরিক্ত বাহন থাকে, সে যেন তা দিয়ে তাকে সাহায্য করে, যার কোনো বাহন নেই। আর যার কাছে অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য থাকে, সে যেন তা দিয়ে তাকে সাহায্য করে, যার খাদ্যদ্রব্য নেই। তারপর তিনি বিভিন্ন প্রকার সম্পদ সম্পর্কে এমনভাবে বলেন। এমনকি আমাদের মনে হলো যে অতিরিক্ত সম্পদের মধ্যে আমাদের কারো কোনো অধিকার নেই। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০৯)
আমাদের উচিত মহান আল্লাহর আদেশ পালনার্থে, মহানবী (সা.)-কে ভালোবেসে তাঁর এই সুন্নত পালন করা, বিশেষ করে এই সংকটের মুহূর্তে সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষকে সহযোগিতার চেষ্টা করা। এতে মহান আল্লাহ আমাদের জীবনকে বরকতময় করে তুলবেন, ইনশাআল্লাহ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন