পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে হজের বিধি-বিধানগত পার্থক্য বিবেচনায় সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। কেননা, প্রিয় নবী (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘তোমাদের জন্য মাবরুর (কবুল) হজ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জিহাদ।’ (বুখারি)।
হজের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু বিধি-বিধান মেনে চলতে হয়। যেমন-
# নারীদের হজের অন্যতম শর্ত মাহরাম (অর্থাৎ পিতা, চাচা, শ্বশুর, ভাই, নিজের ছেলে, ভাতিজা, ভাগিনা, জামাতা ও অন্যান্য) সঙ্গী থাকা। এ মাহরাম সঙ্গীকে অবশ্যই সুস্থ-সক্ষম, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম হতে হবে। আরবি ‘মাহরাম’ অর্থ হালালের বিপরীত বা হারাম। অর্থাৎ ‘যাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ ও সাক্ষাৎ অনুমোদিত’।
# অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া। দৈহিক-আর্থিকভাবে সামর্থ্য রয়েছে নারীদের হজের ক্ষেত্রে স্বামী বা পিতামাতার অনুমতি নেওয়া মুস্তাহাব। তবে অনুমতি পাওয়া না গেলেও হজ করা যাবে, বরং অভিভাবকের উচিত হবে, অনুমতিপ্রত্যাশী নারীদের অনুমতি দেওয়া এবং হজের আনুষঙ্গিক দিক যাচাই করে দেখা। যেমন- মাহরাম সঙ্গী, নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রস্তুতির খোঁজ নেওয়া। যে নারীর জন্য হজ করা ফরজ, তিনি মাহরাম সঙ্গী নিশ্চিত থাকা সাপেক্ষে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াও হজে যেতে পারবেন।
# নারীদের ইহরামের সঙ্গে পুরুষের ইহরামের কাপড়ের পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট। পুরুষের ইহরামের জন্য ব্যবহৃত হয় সেলাইবিহীন দুটি সাদা বস্ত্র। তবে নারীদের ইহরামের কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই। যা উজ্জ্বল রঙের নয়, নজর কাড়া নয় ও শরীর ভালোভাবে ঢাকে এমন ঢিলাঢালা স্বাভাবিক আরামদায়ক যেকোনো রঙের পোশাকে নারীরা ইহরাম বাঁধতে পারেন।
নারীদের ইহরামের পোশাকের অন্যতম শর্ত হলো-
১. নারীদের চেহারা খোলা রাখতে হবে এমন নয়।তবে মাথা ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে, কিন্তু নিকাবের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে মুখ একেবারে ঢাকা যাবে না এবং হাত মোজা ব্যবহার করা যাবে না। তবে হজের সময়ে পরপুরুষদের খুব কাছাকাছি হয়ে গেলে ওড়না দিয়ে বা অন্য উপায়ে সাময়িকভাবে মুখ আড়াল করা যাবে।
২. ইহরাম অবস্থায় কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।
৩. নারীদের ইহরামের কাপড় সাদা বা সবুজ হতে হবে এমনও নয়; বরং লাল, নীল, হলুদ ইত্যাদি রঙেরও হতে পারে।
৪. নারীরা ইহরামরত অবস্থায় পোশাক বদলাতে পারবেন।
৫. নারীরা ইহরামরত অবস্থায় পায়ে মোজা ব্যবহার করতে পারবেন এবং তা উত্তম। এতে পা ঢাকা থাকবে।
৬. নারীদের তাওয়াফের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। যেমন—
* ঋতুবতী অবস্থায়, সন্তান প্রসব-পরবর্তীকাল বা অন্য কোনো মেয়েলি সমস্যায় অপবিত্রতা নিয়ে তাওয়াফ করা যাবে না।
* তাওয়াফের সময় পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য বিশেষ বিধান ‘রামল’ ও ‘ইজতিবা’ নারীদের করতে হবে না। ‘রামল’ ও ‘ইজতিবা’ করা পুরুষদের জন্য সুন্নত।
* নারীরা উচ্চৈঃস্বরে ‘তালবিয়া’ অর্থাৎ লাব্বাইক ধ্বনি করবেন না, বরং নিজে ও পাশের অন্য মানুষ শোনে এমন স্বরে করবেন।
* তাওয়াফ ও হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের সময় নারীদের উচিত ভিড় এড়িয়ে চলা, যেন পুরুষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি না হয়।
* তাওয়াফকালে কোনো নারী ঋতুবতী হলে, তাওয়াফ বন্ধ করে হারাম শরিফের বাইরে চলে যাওয়া জরুরি।
* কোরবানির পর মাথা মুণ্ডনের বেলায় পুরুষরা পুরো মাথা ক্ষৌর করলেও নারীদের শুধু চুলের অগ্রভাগ সামান্য কাটলেই হবে।
নারী হাজিদের হজের সময় নিচের বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে-
* আর্থিক পবিত্রতা, আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাওবার মানসিকতা।
* হজের ফরজ ও ওয়াজিব পালনে সতর্কতা।
* দৃঢ় মনোবল ও সুস্থতা এবং Safty first নীতি।
* নিয়ম-কানুন দোয়া-কালাম শিখে-লিখে ও ক্ষুদ্র পুস্তিকা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখা।
* রোগকে অবহেলা-আড়াল না করা। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র, প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ওষুধ সঙ্গে রাখা এবং নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করা।
* নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী হালকা ও পরিমিত পরিমাণ হওয়া।
* শরীর, সময় ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ইবাদত করা।
বস্তুত হজ একটি পুণ্যময় ইবাদত। হজ ত্রুটিমুক্ত হওয়া একান্ত জরুরি। মহান আল্লাহ বাংলাদেশের নারী হজযাত্রীদের নিরাপদ ও সুস্থ রাখুন। সবার হজ ও সব মোনাজাত কবুল করুন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ