প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ সম্প্রচার করা হবে। সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর তত্ত্বাবধানকারী বিভাগের অধীনে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এ নিয়ে টানা ষষ্ঠবারের মতো বাংলা ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হচ্ছে। এবার খুতবার বাংলা অনুবাদ কার্যক্রমে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব।
তাঁরা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। গতকাল শুক্রবার অনুবাদকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা যায়, আগামী ৫ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র আরাফাতের ময়দানে হাজিদের সবাই অবস্থান করবেন। সেদিন লাখ লাখ হাজির উদ্দেশে মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ।
সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিতে বিশ্বের ২০টিরও বেশি ভাষায় খুতবা সম্প্রচার করা হবে। এসব কাজের তত্ত্বাবধান করছে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী সাধারণ কর্তৃপক্ষ।
সৌদি বার্তা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ১৪৩৯ হিজরি মোতাবেক ২০১৮ সালে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের বিশেষ নির্দেশনায় আরাফার খুতবা অনুবাদ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে শুধু পাঁচটি ভাষায় তা সম্প্রচার করা হয়। পরে ভাষার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
অনুবাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো অনুবাদ প্রকল্পে বাংলা ভাষা যুক্ত হয়। ওই বছর মোট ১০টি ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হয়। পরে ২০২১ সালেও বাংলাসহ মোট ১০টি ভাষায় আরাফার খুতবা অনুবাদ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় সাপ্তাহিক জুমার খুতবার অনুবাদ সম্প্রচারও শুরু করা হয়।
এরপর ২০২২ সালে ১৪টি, ২০২৩ সালে ২০টি ও ২০২৪ সালে ২০টির বেশি ভাষায় আরাফার খুতবা অনুবাদ করা হয়। পাশাপাশি মদিনার পবিত্র মসজিদে নববীর খুতবার অনুবাদ কার্যক্রমও চলছে। মূলত অনুবাদ কার্যক্রম শুধু আরাফাতের খুতবার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং প্রতি সপ্তাহের জুমা, দুই ঈদ, সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টির নামাজ, সালাতুল কুসুফ ও খুসুফের খুতবার পাশাপাশি বিভিন্ন আলোচনা এবং হজ ও ওমরাহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও অনুবাদ করা হচ্ছে। সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে প্রতিবছর অনুবাদ কার্যক্রমে নতুন ভাষা যুক্ত করা হচ্ছে।
এ বছর আরাফাতের খুতবা উপস্থাপন করবেন বাংলা অনুবাদক দলের সদস্য ড. মুহাম্মদ খলীলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হজের খুতবা অনুবাদ কার্যক্রম একটি সম্মানের কাজ। এর মাধ্যমে বাংলাভাষী মুসলিমদের কাছে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে আমরা চারজন বাংলাদেশি দায়িত্বটি পালন করছি। একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি মনে করি, হজের খুতবা নিজ ভাষায় শুনতে পাওয়া একটি গৌরব ও সম্মানের বিষয়। আশা করি, বাংলাভাষী মুসলিমরা হারামাইন থেকে সম্প্রচারিত খুতবা নিজ ভাষায় শুনবেন। সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করি, যেন আমরা সবাই গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারি।’
ড. মুহাম্মদ খলীলুর রহমান ২০২৩ সালে মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে দীর্ঘ এক দশক সৌদি ইন্টারন্যাশনাল রেডিওতে অনুবাদক ও সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বর্তমান বাড়ি কুমিল্লার শাসনগাছায়। ১৯৯২ সালে তিনি ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
২০২০ সালে প্রথমবারের মতো হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ করেছিলেন আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান। প্রায়ই তিনি পবিত্র মসজিদুল হারামের জুমার খুতবার অনুবাদ করে থাকেন। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে অনুবাদ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, গত পাঁচ বছরের মতো এবারও পবিত্র হজের খুতবা বাংলায় অনুবাদ করা হবে। মানারাতুল হারামাইন ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা শোনা যাবে।
আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান শিগগিরই উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করবেন। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনীয়া পূর্ব বোমাংখিল গ্রামে।
বাংলা অনুবাদক দলের আরেক সদস্য নাজমুস সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পবিত্র মসজিদুল হারামের খুতবা অনুবাদ কার্যক্রম পুরো বছরব্যাপী একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে যুক্ত থাকতে পারা সত্যিই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের খতিবদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য পাথেয়। তাঁদের বক্তব্য মাতৃভাষী মুসলিমদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা, এই কথাগুলো শুনে আমরা যেন নিজ জীবনে আমল করতে পারি। আমি এটিকে একটি সদকায়ে জারিয়া হিসেবে মনে করি। মহান আল্লাহ আমাদের সবার ভালো কাজ ও এর জন্য প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।’
নাজমুস সাকিব মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করে এমফিলে অধ্যয়ন করছেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার সদর দক্ষিণে। তিনি ২০১৫ সালে ঢাকার জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন।
অনুবাদক দলের আরেক সদস্য মুবিনুর রহমান ফারুক। তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল গবেষক হিসেবে অধ্যয়নরত আছেন। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলায়। তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন।
আরবিতে উপস্থাপিত হজের খুতবা যেসব ভাষায় অনুবাদ করা হবে তা হলো- বাংলা, ফ্রেঞ্চ, মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইটালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো ও জার্মান।
যেকোনো ডিভাইস থেকে মানারাতুল হারামাইন (https://manaratalharamain.gov.sa/) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি ভাষা নির্বাচন করলে খুতবার অনুবাদ শোনা যাবে।
তা ছাড়া মানারাতুল হারামাইন মোবাইল অ্যাপ, আল কোরআন চ্যানেল ও আস সুন্নাহ চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেল (https://www.youtube.com/¦tubesermon), ফেসবুক ও টুইটারে তা শোনা যাবে। আর ওয়েবসাইটে বিগত বছরের খুতবা ও এর অনুবাদও পাওয়া যাবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/নাজিম