প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ হজযাত্রী সৌদি আরব যায়। সৌদি সরকার প্রতিটি দেশ থেকে সুনির্দিষ্টসংখ্যক ব্যক্তিকে হজ করার অনুমতি দিয়ে থাকে। কোটাব্যবস্থার মাধ্যমে এই সংখ্যা নির্ধারণ হয়ে থাকে। আর সে অনুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে মুসল্লিরা হজ করার সুযোগ পায়।
যেভাবে নির্ধারিত হয় কোটা
হাজিদের কোটা নির্ধারণে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করা হয়। তা হলো, প্রতিটি দেশের ১০ লাখ মুসলিম নাগরিকের বিপরীতে এক হাজার ব্যক্তিকে হজের অনুমতি দেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো দেশের সরকার হাজিদের কোটা বৃদ্ধির আবেদন করলে সৌদি সরকার কখনো কখনো তা বিবেচনা করে থাকে। (বিবিসি বাংলা)
হজযাত্রীর সংখ্যায় শীর্ষ ১০ দেশ
কোটা অনুযায়ী হজযাত্রী প্রেরণে শীর্ষ ১০ দেশের পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. ইন্দোনেশিয়া: ২০২৫ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসল্লি হজ করার অনুমতি পেয়েছে। এ বছর তাদের জন্য অনুমোদিত সংখ্যা ছিল দুই লাখ ২১ হাজার। ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমান বসবাস করে। ইন্দোনেশিয়ায় ২৩০ মিলিয়ন (২৩ কোটি) মুসলমান বাস করে, যা জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কোটা পেলেও ইন্দোনেশিয়ার হাজিদের রেজিস্ট্রেশন করার পর হজের সুযোগ পেতে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া তাদের ধর্মীয় শিক্ষা, কঠিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়।
২. পাকিস্তান: চলতি হজ মৌসুমে পাকিস্তানের এক লাখ ৮০ হাজার মুসল্লি হজের অনুমতি পেয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যা ও হজের কোটায় বিশ্বে পাকিস্তনের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটিতে ২২ কোটি মুসলিম বসবাস করে।
৩. ভারত: ২০২৫ সালে ভারত থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার হাজি হজ করার সুযোগ পেয়েছে। ভারতে ২০ কোটি মুসলমান বাস করে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ। ভারতে দীর্ঘ ৮৫ বছর হাজিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে হিন্দুত্ববাদী সরকার তা বন্ধ করে দেয়।
৪. বাংলাদেশ: বর্তমান হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজের অনুমতি পেয়েছে। ২০২৪ সালের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭৩.৫২ মিলিয়ন (১৭ কোটির ওপরে)। তাদের ৯০ শতাংশই মুসলিম।
৫. নাইজেরিয়া: আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসল্লি হজের অনুমতি পায় নাইজেরিয়া থেকে। এ বছর নাইজেরিয়ার ৯৫ হাজার মুসল্লি হজের অনুমতি পেয়েছে। নাইজেরিয়ায় আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করে। তাদের সংখ্যা ৯৫ মিলিয়ন।
৬. ইরান: হজযাত্রীর সংখ্যায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ইরান। দেশটি থেকে এবার ৮৭ হাজার ৫৫০ জন হজের অনুমতি পেয়েছে। সম্প্রতি ইরানি গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, সৌদি আরব ইরানের জন্য নির্ধারিত কোটা বাড়াবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। ইরানে মোট ৮২ মিলিয়ন মুসলমান বাস করে, যাদের বেশির ভাগ শিয়া মতাদর্শে বিশ্বাসী।
৭. আলজেরিয়া: আলজেরিয়ায় ৪১ মিলিয়ন মুসলমান বাস করে, যারা জনসংখ্যার মোট ৯৯ শতাংশ। এই হিসাবে আলজেরিয়া থেকে এ বছর ৪১ হাজার ৩০০ মুসল্লি হজের সুযোগ পেয়েছে। আলজেরিয়ার সঙ্গে সৌদি আরবের ভাষা ও সাংস্কৃতিক মিল থাকায় এবং ভৌগোলিক দূরত্ব কম হওয়ায় দেশটির হজযাত্রীরা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে।
৮. তুরস্ক: তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ মুসলিম, যাদের সংখ্যা ৮৪ মিলিয়ন। সে তুলনায় তুরস্ক থেকে হজযাত্রীদের আগমন কম হয়ে থাকে। এ বছর তুরস্ক থেকে ৩৭ হাজার ৭৭০ জন হজ করার অনুমতি পেয়েছে।
৯. মিসর: ২০২৫ সালে মিসরের জন্য নির্ধারিত কোটা ৩৫ হাজার ৩৭৫ জন। মিসরে ৯৫ মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করে। এই বাইরে মিসরের বিপুলসংখ্যক মানুষ হজ গাইড ও দোভাষী হিসেবে কাজ করে। অনুমতি ছাড়াও অনেক মিসরীয় হজ করে বলে অভিযোগ আছে।
১০. সুদান: চলতি বছরে সুদানের জন্য নির্ধারিত কোটা ৩২ হাজার। সুদানে ৩৯ মিলিয়ন মুসলমান বসবাস করে, যা জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ। সুদানের আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও প্রতিবছর বহু মুসল্লি হজ করে থাকে।
এভিয়েশন এটুজেড ডটকম অবলম্বনে
বিডি প্রতিদিন/মুসা