কোরবানির প্রস্তুতির এখনই সময়। পশুস্বাস্থ্য, অনৈতিক পন্থায় মোটাতাজাকরণ ও মানবদেহে তার ক্ষতিকর প্রভাব পরস্পর সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনৈতিক পন্থায় পশু মোটাতাজাকরণ দণ্ডনীয় অপরাধ এবং ইসলামের দৃষ্টিতে বর্জনীয় বিষয়। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার দায়িত্ব বেশি।
সুরা জুমুয়ায় বলা হয়েছে ‘ওয়া জারুল বাইয়’ অর্থাৎ ‘বিক্রয় বন্ধ করো’। আরবি ‘বায়’ অর্থ বিক্রয়। এতে বোঝা যায়, বিক্রেতাকে মহান আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। বিক্রেতা বিক্রি বন্ধ করলেই তো ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
একইভাবে উৎপাদন পর্যায়ে অনৈতিক পন্থায় মোটাতাজাকরণ বন্ধ হওয়া জরুরি। কেননা কোরবানির পশু মহান আল্লাহর শাহি দরবারে পেশ করা হয়, তাই তা হতে হবে যথাসাধ্য ত্রুটিমুক্ত এবং পুত্রের মতো প্রিয় ও পবিত্র।
কোরবানির কথা চিন্তায় রেখে পশু পালন, মোটাতাজাকরণ একটি ইবাদতমুখী সেবা। তবে বেশি লাভের মোহে নিরীহ, বোবা প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া বা মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া নৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে বর্জনীয়।
যেমন-গ্রোথ হরমোন, ডাইক্লোফেনাক, অনুমোদনহীন স্টেরয়েড ব্যবহার, সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসকের লিখিত পরামর্শ ছাড়া যখন-তখন পশুকে ওষুধ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য দেওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া অভিযোগের তালিকায় আছে তথাকথিত তুলা, ট্যাবলেট, ইনজেকশন, ভিটামিন এবং ইউরিয়া সারের অপপ্রয়োগের ঘটনা।
মোটাতাজাকরণের নামে পশুর প্রকৃতিগত গুণ, বৈশিষ্ট্য বা আকৃতি বদলে ফেলা, যেমন-প্লায়ার্স দিয়ে পশুর দাঁত তুলে ফেলে বয়স প্রমাণের চেষ্টা, রং বদলে দেওয়া, পশুর হূিপণ্ড, কলিজা, ফুসফুস, কিডনি বিকল করে ফেলে এমন ওষুধ প্রয়োগ করা নৈতিকতা পরিপন্থী, হারাম ও প্রতারণা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বিনাস ও বিপর্যয় ধোঁকাবাজদের জন্য...।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১)
প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়।
’ (মুসলিম)
গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য সবুজ ঘাস, লতাগুল্ম। এ ছাড়া কৃষিশিল্প উপজাত যেমন—খড়, আখের আগা, ফলের ছোবড়া ইত্যাদি এবং শস্যের উপজাত বা অবশিষ্টাংশ যেমন—ঝোলা গুড়, খইল, ভুসি, আনারসের বর্জ্য। সবুজ খাদ্যের তালিকায় আরো আছে নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও ক্ষুদিপানা। আছে নেপিয়ার, পারা, গাম্বু ঘাস এবং মৌসুমি শস্যের মধ্যে ভুট্টা, মটর, খেসারি, যব, শণ ইত্যাদি।
কৃষিতথ্য সার্ভিসের পরামর্শ হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত মাংস উৎপাদন ও মোটাতাজাকরণ পাঁচটি পদ্ধতির মাধ্যমে করা সম্ভব। যথা—১. পশু নির্বাচন, ২. পশুর বাসস্থান, ৩. প্রতিষেধক, ৪. কৃমিনাশক, ৫. পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ।
কৃষিকথা পত্রিকা থেকে জানা যায়, প্রাথমিক প্রস্তুতিতে এ জন্য একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তার যা করেন তা হলো—
ক) মল পরীক্ষা করে কৃমির ওষুধ দেন।
খ) পাতলা পায়খানা বা পেটে কোনো সংক্রমণ থাকলে, শুধু পরিপাকতন্ত্রে কাজ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেন।
গ) আমাশয় থাকলে মেট্রোনিডাজল গ্রুপের কার্যকর ওষুধ দেন। ফলে পশুর হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয় এবং দ্রুত পশুস্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
ঘাসের অপ্রতুল জোগানের সমস্যা মোকাবেলায় ব্যবহৃত হয় ‘ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র’। তবে এ ধরনের খাদ্য দৈনিক তিন-চার কেজির বেশি খাওয়ালে গরুর শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে, পরে ওই গোমাংস মানবদেহের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গরু মোটাতাজাকরণে দ্রুত ওজন বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রচলিত, অপ্রচলিত খাদ্যের জোগানের মাধ্যমে দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য অবলম্বন করা হয় নানা ধরনের অবৈজ্ঞানিক উপায়। ছোট্ট ঘটনা বলে শেষ করছি, খলিফা উমর (রা.)-এর যুুগে এক বেদুইন একটি গরুর পিঠে বোঝা চাপালে গরুটি তা বহনে অস্বীকৃতি জানায়। মহান আল্লাহ গরুটিকে বাকশক্তি দিয়ে ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। আজও যদি এমন হতো!
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া, গাজীপুর
বিডি প্রতিদিন/এমআই