কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কিন্তু একাকী কোরবানির বিধান বাস্তবায়ন করা কঠিন। ঢাকা শহরে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা কোরবানি দিতে চান কিন্তু সহযোগিতা করার মতো মানুষের অভাবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আবার অনেকেই কোরবানি করার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে পান না। এমন স্বজনহীন মানুষের কোরবানির কাজে এগিয়ে এসেছে ডেমরার জামিয়াতু ইবরাহীম মাহমূদনগর, যা সাইনবোর্ড মাদরাসা নামেই বেশি পরিচিত।
২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে যখন সরকার নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল এবং মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল, তখন অনেকেই কোরবানি করতে পারবেন কি না চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন, তখন সাধারণ মানুষের দ্বিনি ইবাদত পালনে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে জামিয়াতু ইবরাহীম। করোনার বিধি-নিষেধ চলে গেলেও মানুষের আগ্রহের কারণে দ্বিনি খেদমতের ধারা অব্যাহত রেখেছে মাদরাসাটি। মাদরাসার এই সেবা দ্বারা যেমন এলাকাবাসী উপকৃত হচ্ছে, তেমনি মাদরাসাও তা দ্বারা আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
এ বছর জামিয়াতু ইবরাহীমের কোরবানি কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন মুফতি দিদারুল ইসলাম, তিনি মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের পরিচালকও বটে। মুফতি দিদার বলেন, ‘আমরা এ বছর তিনটি প্যাকেজ প্রস্তুত করেছি। প্রথমটি ১৭ হাজার টাকা, দ্বিতীয়টি ২২ হাজার টাকা, তৃতীয়টি ১৬ হাজার টাকা। প্রথম দুই প্যাকেজ গরুর সাত ভাগের এক ভাগের জন্য আর তৃতীয় প্যাকেজটি হলো ছাগলের। আমরা যদি প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে কমে পশু কিনতে পারি, তবে কোরবানিদাতাদের টাকা ফেরত দিই। আর বেশি মূল্যে কিনতে হলে অতিরিক্ত টাকা সবার ভেতর সমন্বয় করা হয়। কোরবানি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের শর্ত হলো কোরবানিদাতার উপার্জন শতভাগ হালাল হওয়া।’
তিনি আরো জানান, যাঁরা গরুর প্যাকেজে অংশ নেন তাঁদেরকে হাজারে ১৫০ টাকা কসাই বিল এবং শরিক প্রতি ৬০০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। আর খাসির ক্ষেত্রে কসাই বিল ও সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে এক হাজার ৬০০ টাকা প্রদান করতে হয়।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, কোরবানি কার্যক্রমে গত বছর দুই শতাধিক ব্যক্তি অংশ নিয়ে ছিলেন। গত বছর মোট ৩১টি গরু কোরবানি হয়েছিল। চলতি বছরও কোরবানিদাতাদের কোটা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এ বছর কোরবানির কার্যক্রমে মাদরাসার ১০ শিক্ষক ও ৮০ শিক্ষার্থী অংশ নেবে। প্রতিবছর বিকেল ৪টা থেকে ৫টার ভেতর সব কার্যক্রম শেষ করা হয়। পশু কেনা থেকে জবাই ও গোশত বণ্টন পর্যন্ত সব কার্যক্রম মাদরাসা কর্তৃপক্ষই করে থাকে। তবে কোরবানিদাতা চাইলে সার্বিক কার্যক্রম নিজে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
মাওলানা দিদার বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে কোরবানির সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকি। পশু কেনা, জবাই করা ও গোশত বণ্টন করার ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি শরিয়তের বিধান মেনে চলি। ঈদের নামাজের পর টোকেন নম্বর অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানির পশুর গোশত, হাড়, কলিজা, ফুসফুস, মগজ, ভুঁড়ি-সব কিছু পৃথকভাবে বণ্টন করা হয়। এরপর তা ভাগে ভাগে পলিথিনে ভরা হয়। অতঃপর সব কিছু একটি ব্যাগে ভরে তার ওপর কোরবানিদাতার নাম-ঠিকানা লিখে রাখা হয়।’
মাওলানা দিদারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোরবানির কার্যক্রম পরিচালনা করে মাদরাসা কতটা উপকৃত হয়? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের দ্বিনি সেবা প্রদানের লক্ষ্য থেকে কার্যক্রমটি পরিচালনা করি। এর ফলে বহু মধ্যবিত্ত মানুষ কোরবানি করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে মাদরাসা খুব বেশি লাভবান হয় এমন না। আবার কিছুই থাকে না, তাও নয়। কোরবানির পশু কেনার পর সেবাযত্নের কাজগুলো মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করে থাকে। ফলে আমরা সামান্য চার্জ গ্রহণ করি। বেশির ভাগ কোরবানিদাতা তাঁদের পশুর চামড়া মাদরাসায় দান করে যান। কেউ কেউ ছাত্রদের জন্য সামান্য গোশত রেখে যান। এতটুকুই মাদরাসার উপকার। একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তা হলো, আমরা মাদরাসায় পশুর চামড়া দান করতে উৎসাহিত করি। তবে কোরবানিদাতা চামড়ার মূল্য নিতে চাইলে নিতে পারেন। শতভাগ গোশত কোরবানিদাতার হাতেই তুলে দেওয়া হয়। তাঁদের কাছে আকার-ইঙ্গিতেও গোশত চাওয়া হয় না। যাঁরা দেন, স্বেচ্ছায় দেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই