পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় শুরু হতে যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং। চলতি বছরের শেষ নাগাদ দেশটিতে ইসলামী ব্যাংকিং শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঘানার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘দ্য ব্যাংক অব ঘানা’ এ ক্ষেত্রে আগ্রহী ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে। উভয় পক্ষের ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা ইসলামী ব্যাংকিং শুরু করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কেননা এতে ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো দূর হবে। এই উদ্যোগের ফলে ঘানার সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য ব্যাংকিংসেবা লাভের সুযোগ করে দেবে। তা ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিং— এই নামের দিকে না তাকিয়ে ঘানায় নতুন মাত্রার একটি নৈতিকতাসম্পন্ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক মডেলও দাঁড় করানো সম্ভব। এর ফলে সমৃদ্ধি, আর্থিক কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতায়নের বিস্তার ঘটবে।
স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে ঘানার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক ও তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে কার্যকর ও নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার ভিত্তি তৈরি করে। যাদের লক্ষ্য হবে ঘানার সংবিধানের ৯৩০ ধারায় বর্ণিত সুদহীন ব্যাংকিংব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
ইসলামী ব্যাংকিং হলো সুদবিহীন ব্যাংকিংব্যবস্থা, যা ঘড়হ-ওহঃবত্বংঃ ইধহশরহম (ঘওই) নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থা, যা ঝুঁকি ভাগাভাগি, সুদ নিষিদ্ধকরণ, অনুমান থেকে বিরত থাকা এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ বিনিয়োগের নীতিতে পরিচালিত হয়।
যদিও ইসলামী ব্যাংকিং ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তবে এটি গ্রহণের জন্য মুসলিম হওয়া শর্ত নয়, বরং এটি একটি মূল্যবোধভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থা, যা অন্যান্য ধর্মের অনেক মূলনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ; যেমন—ন্যায়পরায়ণতা, সুবিচার, দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা ও অসহায়দের প্রতি সহানুভূতি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘানায় ইসলামী ব্যাংকিং চালু হলে আর্থিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশটির বৃহত্তর আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। বিকল্প অর্থনৈতিক অবকাঠামো প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সম্প্রসারণ, আকর্ষণীয় বিনিয়োগ লাভ এবং নৈতিক ও স্থিতিশীল আর্থিক অনুশীলনের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং প্রচলিত ব্যবস্থার জন্য সম্পূরক ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঘানার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ সাধারণ আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়। ব্যক্তি, নৈতিক ও সামাজিক কারণের পাশাপাশি সুদি ব্যাংকিংব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এর অন্যতম কারণ।
ইসলামী ব্যাংকিং এই শ্রেণির মানুষের জন্য আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠতে পারে। আবার ঘানার নাগরিকদের অনেকেই ধর্মীয় ও নৈতিক কারণে সুদি লেনদেনে অনাগ্রহী, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা সুদি লেনদেনে বাধ্য হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকিং তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে আর্থিক আচরণের সমন্বয় সাধন করবে।
ইসলামী ব্যাংকিং বিশ্ব অর্থনীতির একটি বড় পুঁজিবাজারে যুক্ত হওয়ার এবং মূল সংগ্রহের সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। বৈচিত্র্য আনবে ঘানার আর্থিক খাতেও। ঘানার ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি কমাবে।
ঘানার বেশ কিছু ব্যাংক এরই মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং চালুর ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা তাদের পণ্যের পরিসর বাড়াতে ও আয়ের উৎস বৈচিত্র্যময় করতে এটিকে সময়োপযোগী সুযোগ হিসেবে দেখছে। কিছু প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, বিশেষত সুদবিহীন ব্যাংকিং উইন্ডো চালু করা এবং কর্মীদের ইসলামী ফাইন্যান্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ধারা ৯৩০-এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আইনগত ভিত্তি এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে এবং খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আগ্রহও স্পষ্ট। যখন নিয়ন্ত্রক ও তদারকি কাঠামো চূড়ান্ত হবে, ইসলামী ব্যাংকিং শুধু আর্থিক পরিষেবার ক্ষেত্রেই নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নের জন্যও একটি রূপান্তরমূলক হাতিয়ার হয়ে উঠবে, যা ঘানার জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।
ইসলামিক ফাইন্যান্স নিউজ অবলম্বনে
বিডি প্রতিদিন/কেএ