বর্তমান সাংসদদের অধিকাংশকেই বহাল রাখার পাশাপাশি হাতে গোনা কয়েকটি নতুন মুখকেও এবার পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার নির্বাচনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো এবারও রাজ্যের ৪২ টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল।
গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী প্রার্থীদের প্রায় সবাইকে রেখে দুই-একটি কেন্দ্রে নতুন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দলনেত্রী মমতা ব্যনার্জি জানিয়ে দিলেন তারা আশাবাদী সবকয়টি আসনেই তাদের মনোনীত প্রার্থীরাই জয়ী হবে। এবার তিনি রাজনীতিতে নিয়ে আসছেন টালিগঞ্জের জনপ্রিয় নায়িকা মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহানসহ কয়েকজন অভিনেত্রীকে।
মঙ্গলবার দুপুরে কালীঘাটে তৃণমূলের ১২ সদস্যের নির্বাচনী কমিটির সাথে বৈঠকে বসেন দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ওই কমিটিকেই লোকসভা ভোটের প্রার্থীদের বিষয়গুলি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটির সাথে বৈঠকেই প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর তা ঘোষণা করা হয়। আসলে মমতা চেয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা যাতে সময় নষ্ট না করে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েন।
লোকসভার ৪২ টি আসনে একদিকে যেমন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদরা রয়েছেন, ঠিক তেমনি চমক ও গ্লামার-অঙ্ক বাড়াতে বিদ্বজন, সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও প্রার্থী তালিকায় জায়গা পেয়েছেন।
এবারে মমতার লোকসভা প্রার্থী তালিকায় ২৫ জন পুরুষ এবং নারী প্রার্থী রয়েছেন ১৭ জন। সংখ্যালঘু প্রার্থী আছেন ৭ জন।
মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি লড়বেন ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে, বালুরঘাট থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন বিশিষ্ট নাট্যপরিচালক অর্পিতা ঘোষ, বারাসাত থেকে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বীরভূম থেকে অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, দমদম থেকে সৌগত রায়, উত্তর কলকাতা থেকে সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, দক্ষিণ কলকাতা থেকে মালা রায়, আসানসোল থেকে প্রার্থী হয়েছেন মুনমুন সেন, টালিগঞ্জের অভিনেতা দেব (দীপক অধিকারী)-কে প্রার্থী করা হয়েছে ঘাটাল কেন্দ্র থেকে, তাপস পালের জাইগায় কৃষ্ণনগর থেকে প্রার্থী হয়েছে মহুয়া মৈত্র।
তবে সবথেকে বড় চমক অভিনেত্রী মিমী চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহানকে প্রার্থী করা। যাদবপুর কেন্দ্রে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী, বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে। পাশাপাশি রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জিকে প্রার্থী করা হয়েছে বাঁকুড়া থেকে।
আশ্চর্যজনক ভাবে এবারের নির্বাচনে ১০ শতাংশ বর্তমান সংসদকে টিকিট দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে অন্যতম তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি সুব্রত বক্সী, সুগত বসু, সন্ধ্যা রায়, উমা সোরেন, ইদ্রিস আলী মতো নেতারা রয়েছেন।
এদিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে ১৭তম লোকসভা নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, নানা কারণে এবার এই নির্বাচন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জের। কারণ দেশে বিভাজনের রাজনীতি চলছে। বিবেদের রাজনীতি শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ নিয়েই অখিলেশ – মায়াবতির ডাকলে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বারানসিতেও প্রচারে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন মমতা। তিনি জানান, ৪১ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দিয়ে অন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আমরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি। অনেকেই নারীদের সংরক্ষণের কথা বলে কিন্তু আমাদের এটা ঘোষণা করার দরকার নেই। এটা আমাদের কাছে একটা গর্বের বিষয়।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ওড়িশা, আসাম, ঝাড়খণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ও তার দল লড়াই করবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল