পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে সপ্তম দফায় আগামীকাল ২৬ এপ্রিল ৩৪ আসনে ভোট নেওয়া হবে। কঠোর নিরাপত্তা ও কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত চলবে এই ভোটগ্রহণ।
এই দফায় রাজ্যটির মুর্শিদাবাদ জেলার ৯ টি, পশ্চিম বর্ধমান জেলার ৯ টি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ৬ টি, মালদা জেলার ৬ টি এবং কলকাতার ৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। কোভিডের কারণে এই কেন্দ্রগুলিতে ৪৮ ঘণ্টার বদলে ৭২ ঘণ্টা আগে নির্বাচন প্রচারণা শেষ হয়।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সপ্তম দফায় মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর- এই দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল সামশেরগঞ্জের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ রেজাউল হক এবং পরদিন ১৬ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে জঙ্গিপুরের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী প্রদীপ নন্দীর মৃত্যু হয়। ফলে এই দুইটি কেন্দ্রে আগামী ১৬ মে ভোট নেওয়া হবে (এই দুই কেন্দ্রে গণনা ১৯ মে)।
২৮৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে এই দফায়। চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে ৭৯৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন থাকবে।
এই দফায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কলকাতার ভবানীপুর আসনটি। দক্ষিণ কলকাতার এই বিধানসভা কেন্দ্রটি থেকেই ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। কিন্তু গত কয়েক দশকে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত হয়ে উঠেছিল এই কেন্দ্রটি। এমনকি ২০১১ সালে রাজ্যে বাম সরকারের পতনের সময় তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যনার্জি নিজের সাংসদ পদত্যাগ করে নিশ্চিত জয়ের আসন থেকেই জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১১ সালের উপনির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্রে ৫৪ হাজারের ব্যবধানে জিতেছিলেন মমতা। যদিও ২০১৬ সালের মমতার জয়ের ব্যবধান কিছুটা কমে যায়। আর ২০১৯ সালের লোকসভার নির্বাচনের নিরিখে ভবানীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় বিজেপি। সেবার তৃণমূলের থেকে ১৮৫ টির বেশি ভোটে লিড ছিল বিজেপির।
আর একুশের নির্বাচনে সেই ভবানীপুর ছেড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ‘নন্দীগ্রাম’ বিধানসভার কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তার জায়গায় ভবানীপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্যটির বিদ্যুৎ মন্ত্রী ও সিনিয়র তৃণমূল নেতা শোভনদেব ভট্টাচার্য। তার প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। প্রসঙ্গত ভবানীপুর কেন্দ্রে প্রচুর অবাঙালি মানুষের বসবাস। এই ভোটব্যাঙ্কটা একটা সময় তৃণমূলের ছিল। গত পাঁচ বছরের একটু একটু করে গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সেই ধারাই বজায় থাকে কি না সেটাই এখন দেখার।
ভবানীপুর ছাড়াও এই দফায় ভোট হবে রাশবিহারী, বালিগঞ্জ ও কলকাতা বন্দর আসনেও। কলকাতা বন্দর আসনটিও তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। দলের প্রার্থী ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও এই আসনটিতে রেকর্ড ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল ঘাসফুলের দল। রাশবিহারী কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী দেবাশীস কুমার, বিজেপির প্রার্থী লেফটেন্যান্ট (অব:) সুব্রত সাহা। বালিগঞ্জ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, সিপিআইএম’এর ফুয়াদ হালিম, আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ফ্যাসন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল, আসানসোল উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী মন্ত্রী মলয় ঘটক, বালুরঘাট কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী, জামুড়িয়া কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিষদের সভাপতি ঐশী ঘোষ।
এই দফায় মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার আসনগুলিতেও সংখ্যালঘু ভোট কোন দিকে যাবে সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি। এই দুইটি জেলা বরাবরই ভাল ফল করে এসেছে কংগ্রেস। এবারও বাম ও আইএসএফ’এর সাথে জোট করে ভাল ফলের আশায় শতাব্দী প্রাচীন দল কংগ্রেস। কিন্তু মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে গেলে অঙ্ক অন্যরকম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক রোড-শো, পদযাত্রা ও বাইক র্যালিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক জনসভাগুলিতেও ৫০০-এর বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে তার ভাতিজা ও দলের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী প্রত্যেকেই সমস্ত রাজনৈতিক সভা, র্যালি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিবর্তে তাদের অনেকেই ভার্চুয়াল র্যালির ওপর জোর দিয়েছেন।
অষ্টম তথা শেষ দফায় আগামী ২৯ এপ্রিল ৩৫ টি আসনে ভোটগ্রহণ। ভোট গণনা আগামী ২ মে। ওই দিনই আসাম (১২৬ আসন), তামিলনাড়ু (২৩৪), কেরালা (১৪০) ও কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য পডুচেরি (৩০)-তেও বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল