‘নারদা স্টিং অপারেশন’ মামলায় অভিযুক্ত গ্রেফতারকৃত পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রীসহ চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীকে আপাতত জেল হেফাজতেই আছেন। গতকাল বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে ওই মামলার শুনানি চলে কিন্তু প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন পক্ষের সওয়াল জবাবের পর বৃহস্পতিবার বেলা ২টা পর্যন্ত মামলার শুনানি স্থগিত করে দেওয়া হয়।
ফলে রাজ্যের পরিবহন ও আবাসন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক ও সাবেক পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র এবং কলকাতার সাবেক মেয়র ও রাজ্যের আরেক সাবেক মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশই বহাল থাকবে। এই চার জনের মধ্যে একমাত্র ফিরহাদ হাকিমই কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালে রয়েছেন। বাকীরা শারীরিক অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আজ বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি শুরু হলে সেখানেই তাদের সকলের জামিন পাওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ হবে। গতকাল বুধবার নির্ধারিত সময় দু’টার কিছু পরে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ‘নারদা’ সম্পর্কিত দুইটি মামলার শুনানি শুরু হয়। একদিকে হাইকোর্টের তরফে জামিন স্থগিতাদেশের পুনর্বিবেচনা চেয়ে চার নেতা-মন্ত্রীর আর্জির শুনানি, অন্যদিকে এই মামলা রাজ্যের বাইরে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করানো নিয়ে সিবিআই’এর এক আবেদন নিয়েও শুনানি ছিল।
কারণ সিবিআই’এর আবেদন ছিল বাংলায় নারদ মামলা চললে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছেন তারা। আর এই প্রেক্ষিতেই এই মামলায় নাম যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জির নামও। সিবিআই’এর অভিযোগ সোমবার গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী সহ তিন মন্ত্রী-সাংসদ প্রভাব বিস্তার করেছে। এদিন মূলত এই মামলাটি অন্যত্র স্থানান্তরিত করার বিষয়টি নিয়েই সওয়াল জবাব হয়।
গ্রেফতারকৃত চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের হয়ে এদিন আদালতে সওয়াল করেন কংগ্রেস সাংসদ ও বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি, সিদ্ধার্থ লুথরা। আর সিবিআই’এর হয়ে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই.জে.দস্তুর। এদিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে দুই পক্ষের সওয়াল জবাব। বৃহস্পতিবার ফের শুনানি। ফলে কার্যত এদিন চার নেতার জামিন সম্পর্কিত সওয়াল-জবাবের কোন সুযোগই মেলেনি।
গত সোমবার এই চার নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এরপর তাদের নিয়ে আসা হয় সিবিআই’এর কার্যালয় নিজাম প্যালেসে, সেখান থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাদের সকলেরই কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালতে শুনানি চলে। নিম্ন আদালত তাদের চারজনকেই জামিন দিলেও ওইদিন রাতেই কলকাতা হাইকোর্ট ওই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় এবং বুধবার পর্যন্ত তাদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। এরপর গভীর রাতেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ওই চার নেতা-মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সি জেলে।
কিন্তু শ্বাসকষ্ট সহ অন্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে মঙ্গলবার ভোর রাতে মদন মিত্র ও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে। পরে সকালের দিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সুব্রত মুখার্জিকেও। অন্যদিকে প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই প্রকাশ্যে আসে নারদা স্টিং অপারেশনের ভিডিও। ওই ভিডিওতে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখার্জি, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ঘুষের রুপি নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্তদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিধানসভার নির্বাচন শেষ হওয়ার পরই রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতার গ্রেফতার নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্যের রাজনীতি।
আর এই চার নেতা-মন্ত্রীর গ্রেফতারি প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অন্যদিকে নারদ মামলায় অভিযুক্ত সাবেক তৃণমূল নেতা মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীকে কেন গ্রেফতার করা হয় নি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গড়িয়াহাট থানায় এফআইআর দায়ের করল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের দাবি বেআইনি ভাবে তাদের দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি না নিয়ে তিন বিধায়ককে কেন এভাবে গ্রেফতার করা হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর