১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৬:২৮
পেট্রাপোল স্থলবন্দর

পরিবহন কর্মীদের আন্দোলনের জেরে ব্যাহত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পরিবহন কর্মীদের আন্দোলনের জেরে ব্যাহত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থলবন্দর পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল। কিন্তু সেই স্থলবন্দরের ভারতীয় দিকে সুসংহত চেক পোস্ট (আইসিপি)-তে প্রবেশের মুখে বিভিন্ন সময় বিএসএফ’এর বাধার সম্মুখীন হতে হয়ে বলে অভিযোগ পরিবহন কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের। আর এই অভিযোগ তুলে ওই স্থলবন্দরে আন্দোলনে নেমেছে পরিবহন কর্মীরা। আর এই আন্দোলনের ফলে ব্যাহত হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ইউনিক কার্ড ছাড়া কোনো পরিবহন কর্মীকে আইসিপির মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমদানি-রফতানির সাথে যুক্ত থাকা কর্মীদের। এই কারণে সোমবার থেকে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে পরিবহনসহ পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। গতদিনের মতো মঙ্গলবারও তাদের আন্দোলন চলছে, ফলে দুই দিন ধরে ব্যাহত সীমান্ত বাণিজ্য।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, নতুন ইউনিক কার্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত পুরনো নিয়মে তাদের আইসিপি-তে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মানা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

এ ব্যাপারে ‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’এর সেক্রেটারি কার্তিক চক্রবর্তী জানান ‘কয়েকদিন আগে বিএসএফ’এর এক শীর্ষ কর্মকর্তা কয়েকজন ট্রাক চালক, হেল্পার, পরিবহন শ্রমিক অবৈধ কাজকর্মের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছিলেন এবং তাদের চিহ্নিতও করেছেন। কিন্তু তার জন্য নতুন কার্ড ইস্যু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার কোন অর্থ হয় না। একটি ইউনিক কার্ড তৈরিতে যে সময় লাগে তা কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি (এলপিআই) দেয়নি। আমাদের দাবি ছিল সিকিউরিটি চেকিং চারগুণ বাড়িয়ে দিয়ে পুরোনো প্রক্রিয়াতেই আমদানি-রফতানির সাথে যুক্ত কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু সেই দাবি না মানায় আমাদের এই প্রতিবাদ।

পেট্রাপোলের এক্সপোর্ট কর্মকর্তা গিরিধর এস জানান, ‘আমাদের তরফে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমদানি-রফতানির সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের একক প্রচেষ্টায় কিছু করতে পারি না।’

পেট্রাপোল আইসিপি’এর কাস্টমস কর্মকর্তা সুমন মজুমদার জানান ‘কাস্টমসের তরফে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু পরিবহনের সাথে যুক্ত কর্মীদের আন্দোলনের কারণে গত সোমবারের মতো মঙ্গলবারও কোন আমদানি-রফতানি হচ্ছে না।

বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া বলেন, পেট্রাপোল সীমান্তে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই কারণে আন্দোলনের জেরে বন্ধ হয়ে আছে আমদানি-রফতানি। আইসিপির ম্যানেজারের সাথে আলোচনা করে সমস্যা নিরসন করার উদ্যোগী হবেন বলেও জানান তিনি।

এব্যাপারে বিএসএফ’এর তরফে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে আইসিপি-পেট্রাপোলে চোরাচালান কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে, বিএসএফ তাদের নজরদারি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। কয়েক দিন ধরে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে যে কিছু ট্রাক চালক যারা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি ও  করে তারা আন্তঃসীমান্ত অপরাধ যেমন সোনা, রূপা, ফেনসিডিল সিরাপ, মাদক ইত্যাদি চোরাচালানের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ গত ১৬ জানুয়ারি আইসিপি-পেট্রাপোলের মাধ্যমে সড়কপথে  ও আমদানিতে নিয়োজিত ট্রাক চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা চেক করে বিএসএফ। এসময় চালকদের কাছ থেকে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে ৫২ টি ড্রাইভিং লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি ফের ৩০ জন ট্রাক চালকের ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। সেই মোতাবেক  বিএসএফ মোট ৮২টি জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স কাস্টমস বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। বিএসএফ’এর তরফে বিষয়টি ভারতীয় কাস্টমস এবং ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, যেসব ট্রাকের চালকের জাল লাইসেন্স পাওয়া যাবে তাদের বিএসএফ বাংলাদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে না।

বিএসএফ’এর বক্তব্য, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি স্থায়ী অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর