কলকাতার পর এবার পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে চালু হলো দ্বিতীয় বাংলাদেশ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার। এখন শিলিগুড়িতে বাড়িতে বসেই হাতে মিলবে বাংলাদেশ যাওয়ার ভিসা। নামমাত্র খরচেই মিলবে এই ভিসা সুবিধা।
বুধবার একটি বেসরকারি সংস্থার (ডিইউ ডিজিটাল বিডি প্রাইভেট লিমিটেড) উদ্যোগে শিলিগুড়ির সেবক রোডের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে নতুন বাংলাদেশের ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ফিতা কেটে এর উদ্বোধন করেন সোনালী ব্যাংকের সিইও এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ইন্ডিয়া অপারেশন) রওসন জাহান।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংকের শিলিগুড়ি শাখার ম্যানেজার শামীম আখতার, ডিইউ ডিজিটাল বিডি প্রাইভেট লিমিটেড’র এমডি শিবাজ রাইসহ অনেকেই। নতুন এই ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ফলে রাজ্যটির উত্তরবঙ্গের মানুষদের অনেকটাই সুবিধা হবে। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভুটানের মানুষেরাও এই ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকে সুবিধা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিদিনই এপার বাংলা থেকে প্রচুর মানুষ পদ্মা পারের দেশটিতে পাড়ি দেন। বিশেষত ব্যবসায়ী ও পর্যটকের সংখ্যা থাকে বেশি। এর জন্য প্রতিদিন প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার ভিসার আবেদন করে। বছরে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে প্রচুর মানুষ ভিসা পেতে অজান্তেই দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রচুর টাকা খুইয়ে ফেলে। অনেকে আবার ভিসা পেতে কলকাতায় সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। এই সমস্ত সমস্যার কথা মাথায় রেখে মূলত উত্তরবঙ্গের মানুষদের জন্য এবার শিলিগুড়িতে এই ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু হয়।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমোদিত একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এবং বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের সহযোগিতায় এই কেন্দ্রে চালু করা হয়েছে। এখানে আবেদনকারী তাদের পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় নথি দিয়ে সামান্য খরচে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখানে ভিসা প্রসেসিংয়ের খরচ ধার্য করা হয়েছে জিএসটিসহ ৮২৫ রুপি। সেই ভিসা বাড়িতে বসে পেতে গেলে কুরিয়ার চার্জ বাবদ অতিরিক্ত ৪০০ রুপি। সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যেই তা বাড়ি বসেই পেয়ে যাবেন আবেদনকারীরা। কারোর যদি আবেদন জমা করতে কোনো সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে এই কেন্দ্রের কর্মীরা তাদের সহযোগিতা করবেন।
আবেদনকারীদের সুবিধার্থে নতুন এই ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে থাকছে ভিসার আবেদনপত্র পূরণের সহায়তার জন্য হেলফ ডেস্ক, ফটো ডেস্ক, ফটোকপি পরিষেবার ডেস্ক, ইলেকট্রনিক কিউইং মেশিন, কুরিয়ার সার্ভিস প্রমুখ। এই ভিসা কেন্দ্রটি খুলে যাওয়ায় পর্যটনের ক্ষেত্রে উন্নতি হবে বলে মনে করছে দুই দেশের পর্যটন মহল।
এদিন অনুষ্ঠানে এসে সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তথা সিইও রওসন জাহান বলেন, ‘এর আগে উত্তরবঙ্গের মানুষদের ভিসা পেতে কলকাতা, গুয়াহাটি কিংবা দিল্লিতে যেতে হতো। সেখান থেকেই তাদের ভিসা দেওয়া হতো। যা অনেকটাই সময় সাপেক্ষ। অন্যদিকে, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে হয়রানি হতে হতো তাদের। এমনকি দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রচুর টাকা খরচ করেন অনেকেই। সেই সমস্ত দালাল চক্র রুখতে ও উত্তরবঙ্গবাসীর সুবিধার্থেই এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে।’
সোনালী ব্যাংকের শিলিগুড়ি শাখার ম্যানেজার শামীম আখতার বলেন, ‘এই কেন্দ্রে ভিসা আবেদন করা যাবে। একইসাথে সোনালী ব্যাংক থেকে কারেন্সি পরিবর্তন করানো যেতে পারে। জনগণের সুবিধার্থে নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশনের সামনে একটি কারেন্সি বুথ থাকবে এই ব্যাংকের।’
উল্লেখ্য, ভারতীয় নাগরিকদের উন্নততর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কলকাতা মিশনেও ভিসা আউটসোর্সিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর কলকাতা সেক্টর ফাইভ এলাকায় প্রথম বাংলাদেশ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের উদ্বোধন হয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে যার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই