২৫ জুন, ২০২২ ১৬:৩৬
পদ্মা সেতুর লাইভ উদ্বোধন দেখানো হলো কলকাতায়

সেতুর উদ্বোধন দেখে আবেগতাড়িত পদ্মা নদীর মাঝির পরিচালক গৌতম ঘোষ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সেতুর উদ্বোধন দেখে আবেগতাড়িত পদ্মা নদীর মাঝির পরিচালক গৌতম ঘোষ

প্রত্যয় থাকলে, ভালোবাসা থাকলে, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে, এরকম একটা সেতু তৈরি করা যায়- এই মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। 

শনিবার সকালে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের বাংলাদেশ গ্যারালিতে জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর লাইভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন গৌতম ঘোষ। 

আবেগতাড়িত এই চিত্র পরিচালক জানান, ‘আমি খুবই স্পর্শকাতর। আমি আলোড়িত হয়ে গেছি। কারণ, পদ্মা সেতু নির্মাণ যেভাবে হয়েছে এটা আমাদের সকলের কাছে প্রতীক।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেই আমি সেখানে শুটিং করতে গিয়েছিলাম, পদ্মা সেতুর ছবি তুলেছিলাম। তখনই আমার মনে হচ্ছিল পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে এরকম বড় মাপের একটি সেতু নির্মাণ অসাধারণ কাজ। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি স্যালুট জানাই। কারণ, এত বাধা, বিপত্তি সত্ত্বেও তার নেতৃত্বে এটা সম্ভব হয়েছে।’

এই পদ্মা নদীকে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল ‘পদ্মা নদীর মাঝি, মনের মানুষ’ এর মতো সিনেমা। সেই কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গৌতম ঘোষ বলেন, ‘আমি যখন পদ্মা নদীর মাঝি তৈরি করেছিলাম, তখন যে নৌকা ছিল সেগুলো পাল্টে গেছে, যন্ত্রচালিত অনেক নৌকা এসেছে এবং পদ্মার যে রূপ ও বৈচিত্র নানা সময় বদলায়।’

তার সতর্কবার্তা ‘নদীকে নষ্ট না করে, মানুষ কীভাবে সেটাকে ব্যবহার করবে, সেটাই এখন দেখার। যদি ভালো করে ব্যবহার না করা হয় তবে যে কোনো নদীই ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সম্প্রচার হওয়া পদ্মা সেতুর ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে এদিন কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক স্নেহাশীষ সুর, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব মোহাম্মদ বাশির উদ্দিন প্রমুখ।

পবিত্র সরকার বলেন, ‘আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলব যে, ভারতের অজস্র মানুষ বাংলাদেশে যেতে চান, আবার বাংলাদেশের মানুষ এখানে আসতে চান। ফলে পর্যটন দিক থেকে যেমন উন্নতি হবে, তার অর্থনৈতিক পণ্য পরিবহনের দিক থেকে বিশাল সুযোগ হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে দুই দেশের মানুষ একে অপরকে আরও ভালো করে জানতে পারবে, বুঝতে পারবেন। এখন হয়তো যে সংশয় বা সন্দেহগুলো আছে কাছাকাছি গেলে সেগুলি দূর হয়ে যাবে। তারা বুঝতে পারবেন সব মানুষ সব জায়গায় এক। সকলের শুভ বুদ্ধি এবং সম্প্রীতি পোষণ করেন। ফলে এই একটা বৃহৎ মানবিক ক্ষেত্রে বিস্তারিত হবে। তার অভিমত, যে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হবে সেটা অপরিসীম। সেটাই আমি মনে করি, এইটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমাদের দেশের পক্ষে একটা নতুন স্বপ্নের উন্মোচন। 

তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ব বাংলাদেশ আমার জন্মস্থান। ফলে আমার জন্মস্থান বদলাবে না। মৃত্যু কোথায় হবে আমি জানি না, তবে পূর্ববাংলার মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, পশ্চিমবাংলার মানুষ অনেক জানতে চান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ববাংলা কীভাবে এগিয়ে চলেছে, সেটা জেনে তারা গর্বিত বোধ করবেন। আজকে সমস্ত বাঙালির গর্বের দিন, দক্ষিণ এশিয়া, এই উপমহাদেশের অহংকারের দিন।’

স্নেহাশীষ সুর বলেন, ‘পদ্মা সেতুর গুরুত্ব যে কত বড় সেটা আমরা ভবিষ্যতে বুঝতে পারব। এটা শুধু একটি প্রকৌশল, অর্থনৈতিক আত্মবিশ্বাস বা সাবলম্বি হওয়ার নিদর্শন নয়। এটার মাত্রা অনেক বড়। এখানে অনেকগুলো স্তর আছে- কিছু আছে বাহ্যিক, কিছু স্তর হৃদয়ের। এর ফলে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ মানুষের চলাচলের ব্যাপক সুবিধা হবে। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য চলাচল এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের অন্য রাজ্যে পণ্য চলাচল ও যাত্রী চলাচলের সময় কমে যাবে, সুবিধা হবে আমাদের সকলের।’

আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, ‘আমরা নদীর দেশের মানুষ, এর মধ্যে প্রাণের নদী পদ্মা বাংলাদেশের জীবন। এই সেতুর ফলে শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে না, এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে সংস্কৃতি, আবেগ, গর্ব-এই সম্পর্কগুলোর শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যখন বিভিন্ন ষড়যন্ত্র, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল- এগুলো সবকিছু অতিক্রম করে আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে কলকাতার ৮টি পয়েন্টে জ্বলজ্বল করছে বিশাল আকারের মোট ৮টি বিলবোর্ড। এর মধ্যে ৫টি ডিজিটাল বিলবোর্ড এবং ৩টি অ্যানালগ বিলবোর্ড (ফিক্সড)। ওই বিলবোর্ডগুরোতে ভেসে উঠছে পদ্মা সেতুর ছবি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ওই ৮টি বিলবোর্ডে বড় বড় হরফে লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে পদ্মা সেতু’।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর