ক্লাব, রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ‘সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে একাধিক অভিযোগ জানাতে এসে চড় খেয়েছেন এক ব্যক্তি। ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাশীন দল তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের দিকে। গোটা ঘটনাই ঘটলো রাজ্যের এক মন্ত্রীর সামনেই। এ ঘটনায় উপস্থিত সকলেই হতবাক!
মাস কয়েক পরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। পরের বছর, ২০২৪ সালে ভারতে লোকসভার নির্বাচন। তার আগে ভোটারদের মন পেতে নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। নাম ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’।
কয়েক দিন আগে মমতার ভাতিজা ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি এই প্রকল্পের সূচনা করে বলেছিলেন, কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, যুবশ্রী, ঐক্যশ্রীসহ ১৫টি সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।তিনি আরো জানান, আগামী দুই মাস ধরে দলের সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ রাজ্য স্তরের নেতারা গ্রামে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন। তাদের অভাব-অভিযোগ, মতামত শুনবেন। সেই নেতা চলে যাওয়ার পর সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কিনা তা সুনিশ্চিত করতে সেই বাড়িতে পৌঁছাবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।
সেই মতো গত ১১ জানুয়ারি থেকে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নিয়ে পথে নামে তৃণমূল এবং আগামী ৬০ দিন অর্থাৎ দুই মাস ধরে চলবে এই কর্মসূচি। তারই অংশ হিসেবে শনিবার সকালের দিকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত নীলগঞ্জ সাইবনা শ্রী শ্রী নন্দদুলাল মন্দিরে পুজো দিয়ে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’র প্রচার শুরু করেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা মধ্যমগ্রামের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক রথীন ঘোষ।
এরপর ওই মন্দির কমিটির উন্নয়নের ব্যাপারে এবং স্থানীয় মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন এলাকার বিধায়ক। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্দির কমিটির এক সদস্য সাগর বিশ্বাস। তিনি যখন মন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে এলাকার উন্নয়ন রাস্তাঘাট নিয়ে কথা বলছিলেন, সে সময়ই হঠাৎ করেই সাগরকে সপাটে চড় মেরে বসেন এক ব্যক্তি। তাকে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। গোটা অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রথীন ঘোষ। গোটা ঘটনা গণমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। যদিও তৃণমূলের পক্ষে চড় মারার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
সাগর বিশ্বাস বলেন, আমি জানি না কোন অপরাধে আমাকে চড় খেতে হলো। অভিযোগ জানাতে গিয়ে যদি এরকম হেনস্তার শিকার হয়, তাহলে আর কেউ পরে প্রশ্ন তুলবে না। যদিও এই ঘটনার পরেই সাগর বিশ্বাসকে বুকে জড়িয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে যান মন্ত্রী রথীন ঘোষ।
অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী জানান, তৃণমূলের কোনো সদস্য ওই ব্যক্তিকে চড় মারেননি। এটা তাদের মন্দির কমিটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। সরকারের পক্ষে সকল নাগরিককে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সকলের অভাব-অভিযোগ শোনা হচ্ছে কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত এজেন্ডা নিয়ে আসে, অনুষ্ঠানকে নষ্ট করার জন্য-তাহলে কি করা যাবে?
তবে কেবল মধ্যমগ্রামে নয়, ‘সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে গোটা রাজ্যজুড়েই গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের নেতারা। শুক্রবারই বীরভূমে এই কর্মসূচিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন এলাকার সংসদ সদস্য অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। রামপুরহাটের মাড়গ্রামের মেলেরডাঙা গ্রামে ঢুকতেই আটকানো হয় তার গাড়ি। আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতায় নিজেদের নাম না ওঠা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দেন। যদিও বিক্ষোভের মুখে পড়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন শতাব্দী। তবে তার ক্ষোভ মেটেনি। দুপুরে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে গিয়ে ভাত, ডাল, ছাগলের মাংস দিয়ে লাঞ্চ করার কথা থাকলেও কেবল ভাতের থালা সামনে রেখে ছবি তুলে তার প্রতিশোধ নেন তিনি। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয় তৃণমূলের কাছে।
ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে বিজেপি। দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এ থেকেই পরিষ্কার যে তৃণমূলের কেউ কারও কথা শোনেন না। এরা সকলেই চমকান। তার কটাক্ষ, আসলে এটা দিদির সুরক্ষা কর্মসূচি। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা বলা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই