শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা ইস্যুতে উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি। এই দুর্নীতিতে দেশটির তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) হাতে প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্যটির সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জি। অর্পিতা মুখার্জির দুইটি ফ্লাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় পঞ্চাশ কোটি রুপি, স্বর্ণের গহনা। সেই সাথে পাওয়া গিয়েছিল নিয়োগ সম্পর্কিত একাধিক সনদ-নথি। এরপর দিন যত এগিয়েছে একের পর এক রাঘববোয়ালরা গ্রেফতার হয়েছেন।
অভিযোগ, মেরিট লিস্টে নাম না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র অর্থের জোরে চাকরি পেয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। এমন অবস্থায় শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবিতে মাসের পর মাস বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত করিয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের এক নির্দেশে রাতারাতি চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৪,৮০০ এর বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা। অসৎ পথে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে চাকরি হারাতে পারে আরো কয়েক হাজার সরকারি শিক্ষক-শিক্ষিকা। স্বাভাবিকভাবে যাদের চাকরি গেছে তারা পড়েছেন বিপাকে। ইতিমধ্যেই চাকরি হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন দুইজন শিক্ষক। এমন অবস্থায় মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আদালতের কাছে তার আবেদন- আদালত যেন কারো চাকরি কেড়ে না নেয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি তো বলছি, আমি যদি কোন অন্যায় করে থাকি তবে আমার গালে দু'টি চড় মারুন। আমি কিছু মনে করব না। যদি আমি দেখি আমি দোষী। আমি জীবনে কোন অন্যায় করিনি। এমনকি আমি ক্ষমতায় আসার পর একটা সিপিএমের ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তবে তোমরা কেন খাচ্ছ? দেবার ক্ষমতা নেই অথচ কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে।
ভারতের মনীষী ঋষি অরবিন্দ জন্ম ১৫০তম জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) আলিপুর জাজেস কোর্টের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বলেন এখন প্রতিদিন কথায় কথায় চাকরি চলে যাচ্ছে। কেউ যদি নিচের তলায় অন্যায়ও করে থাকে আমি ন্যায়ের পথে থাকবো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটাই আমার চিরকালের স্বভাব। কিন্তু আমি একটু ভেবে দেখতে বলব সোমবারও জলপাইগুড়িতে দুইজন আত্মহত্যা করেছেন। আজকে একজন চাকরি পাচ্ছে বলে সে তার বাবা মাকে দেখতে পাচ্ছে, বিয়ে করছে। কিন্তু হঠাৎ করে তার যদি চাকরি চলে যায় সে খাবে কি? আমি বলছি যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিন। তাদের জন্য আমার কোন দয়া নেই। কিন্তু ছেলেমেয়ে গুলো যাতে বলির পাঁঠা না হয়, আইন অনুযায়ী তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিন।
মমতার অভিমত, আমাকে আপনার পছন্দ না হতে পারে, আমার দলকে আপনাদের পছন্দ না হতে পারে, আমার সরকার এত মানবিক কাজ করার পরেও আপনাদের পছন্দ না হতে পারে, আমাকে দুইবেলা গালাগালি দিন, আমাকে মারুন, আমি কিছু মনে করব না। তিনি বলেন, কখনো কখনো আমি ভাবি যে আমি নিজেই আদালতে গিয়ে প্র্যাকটিস করি। কেবল সময় পেয়ে উঠছি না কিন্তু কিছু কিছু মামলায় আমি নিজেই জবাবদিহি করব। তাই আমাকে একটু সুযোগ দেবেন আমি কথা দিচ্ছি পয়সা নেব না।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ
