বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

নওগাঁর জগদল বিহার

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর জগদল বিহার

নওগাঁ জেলার ৬৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট। উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে জগদল মৌজায় মাঠের মাঝখানে অবস্থিত স্থাপনাটির নাম জগদল বিহার। প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর ৪০ জন শ্রমিক এর খনন কাজ শুরু করে। এর ফলে সেই বিহারের মাটির ঢিবির নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহাসিক নিদর্শন। ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে বুদ্ধমূর্তি, বিভিন্ন প্রাচীন মূর্তি ও বিশাল আকারের প্রাচীন কালো পাথর, গ্রানাইট পাথরের নির্মিত ১৬ ফুট স্তম্ভ। লিনটনে অলঙ্কৃত বুদ্ধমূর্তি। পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ। জানা গেছে, একাদশ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে এই জনপদে বসবাস করতেন কিছু প্রভাবশালী হিন্দু জমিদার। রামপালের গৌড় রাজা বিহারটি অন্য এক রাজার কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করে রামাবতী নগর নামে রাজধানী স্থাপন করেন। এই রাজধানীর উপকণ্ঠে জগদল বিহারটি স্থাপন করেন। কালের পরিক্রমায় বিহারটি ধ্বংস হয়ে যায়। এর মাঝখানে রয়েছে ছাদবিহীন চাতাল এবং চারটি বাহুতে সারি সারি অপরিসর প্রকোষ্ঠ। অনুরূপ একটি হেবজ  শক্তির মূর্তি ইতিপূর্বে নওগাঁর পাহাড়পুর বিহারে আবিষ্কৃত হয়েছিল। অন্যান্য পুরাবস্তুর মধ্যে রয়েছে পোড়ামাটির ফলক, মৃতপাত্র, পোড়ামাটির গোলক, কারুকাজ করা ইট প্রভৃতি। এই বিহারটিকে বটকৃষ্ণ রায়ের জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষও বলা হয়ে থাকে। 

অযত্ম, অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে প্রাচীন এ ঐতিহাসিক প্রত্ম-স্থাপত্যটি হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে তার সৌন্দর্য। তৎকালীন রামপালের গৌর রাজা রামাবতী নগরে একটি মন্দির তৈরি করেন, যা বাঙালিদের শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তথ্যবিভ্রান্তির কারণে অনেকে জগদল বিহারটি দিনাজপুর জেলায় উল্লেখ করলেও আসলে প্রকৃতপক্ষে এটি যে নওগাঁয় অবস্থিত তা অনেক ইতিহাসবিদেরই অজানা। আবার কেউ দুপক্ষের তথ্যগুলোকে একই মনে করেন। তবে এ কথা সত্য, নওগাঁ জেলা পূর্বে দিনাজপুর জেলার একটা অংশ বিশেষ বলে দাবি করেন ইতিহাসবোদ্ধারা। জগদল বিহারের আর একটি নাম রামৌতি। বিহারের চারপাশে সেই সময়ে সুভকর গুপ্ত, ধর্মকার গুপ্ত, সাক্ষ্যশ্রী নামক অনেক জগৎবিখ্যাত পণ্ডিত, মনীষী বাস করতেন। এখানে এলে জানা যাবে বাংলাদেশের ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক। হয়তো অনেকেই অবাক হবেন বিহারটির স্থাপত্যশৈলী আর চারপাশের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করে। সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রটি হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প করপোরেশনের অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র। সরকার পেতে পারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

এ বিষয়ে প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কাস্টডিয়ান ছাদেকুজ্জামান বলেন, জগদল বিহারের চারপাশ ও আশপাশে বড় বড় অনেক মাটির ঢিবি রয়েছে। এই ঢিবিগুলোতে খনন কাজ চালিয়ে যেতে পারলে বৌদ্ধদের আরও অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হতে পারে। খননের ফলে বেরিয়ে এসেছে মূল মন্দির ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বেশ কয়েকটি কক্ষ। তিনটি বিশালাকৃতির গ্রানাইট পাথর।

সর্বশেষ খবর