পৃথিবীর ১ শতাংশ ধনী মানুষের সম্পদের পরিমাণ এখন বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের সম্মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিবেদনে গতকাল এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খবর বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মাত্র ৬২ জন ধনকুবেরের হাতে যে পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ আছে, তা পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যার সম্মিলিত ধন-সম্পদের সমান। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকের ঠিক আগে প্রকাশ করা এই প্রতিবেদনে অক্সফাম আরও বলেছে, বিশ্বের ‘সুপাররিচ’রা ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছেন, আর গরিবরা আরও বেশি দারিদ্র্যে ডুবে যাচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ৬২ জন ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। সেই জায়গায় পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা- যার মধ্যে আছে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি লোক-তাদের ধন-সম্পদের পরিমাণ একই সময়ের মধ্যে কমেছে ৪১ শতাংশ। ২০১০ সালে ধনকুবেরের সংখ্যা ছিল ৩৮৮ জন, গত বছর ছিল ৮০ জন, আর এবার সেটা নেমে দাঁড়াল মাত্র ৬২ জনে। বিশ্বের এই ৬২ জন ধনকুবেরের অর্ধেকই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা, ১৭ জন ইউরোপিয়ান। বাকি ধনকুবেরদের বেশির ভাগই চীন, মেক্সিকো, জাপান, সৌদি আরব বা ব্রাজিলের। অক্সফাম পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছে, পৃথিবীতে যে ক্রমেই অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে- এই প্রতিবেদন তারই প্রমাণ। অক্সফামের হিসাব অনুযায়ী, ৬৮ হাজার ৮০০ ডলারের মালিক হলে ধনী ১০ শতাংশের মধ্যে প্রবেশ করা যায়। আর ৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বেশি সম্পদের মালিককে ধনী ১ শতাংশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গোটা আফ্রিকা মহাদেশের আর্থিক সম্পদের ৩০ শতাংশই পৃথিবীর বিভিন্ন অফশোর ট্যাক্স হাভেনে গচ্ছিত রাখা আছে। এর ফলে আফ্রিকা প্রতি বছর ১৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ কর রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ আফ্রিকা এই অর্থটা পেলে ওই মহাদেশে প্রতি বছর ৪০ লাখ শিশুকে সঠিক স্বাস্থ্য পরিসেবা দিয়ে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হতো। শুধু তাই নয়, ওই অর্থ দিয়ে আফ্রিকায় যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষকও নিয়োগ করা যেত, যাতে মহাদেশের প্রতিটি শিশুরই স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হতো। এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ বিশ্ব নেতাদের অনেকেই বলেছেন, ধনী ব্যক্তিরা যদি ঠিকমতো ট্যাক্স দিত তাহলে বিপুল পরিমাণ অর্থ দরিদ্র দেশগুলোর জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা যেত।