সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ বন্ধ না হলে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক মহাসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় রামপাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আগামী ২৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরে অর্ধদিবস হরতাল পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সাত দফা দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রামপাল প্রকল্প বাতিলসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে ১৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী দাবি দিবস ও বিক্ষোভ মিছিল, ২৬ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ৭ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ দিবস এবং ২৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরে অর্ধদিবস সর্বাত্মক ধর্মঘট ও হরতাল। হরতালের আগে ১৪ জানুয়ারি দেশবাসীর সামনে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য সুলভ, টেকসই, পরিবেশ ও জনস্বার্থের অনুকূল বিকল্প মহাপরিকল্পনা উপস্থাপন করারও ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশ শুরুর আগে বেলা ১১টা থেকে রামপাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দুপুর ২টায় মহাসমাবেশ শুরু হয়। এতে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় গণফ্রন্ট, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যোগ দেয়। জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল হক, কমরেড টিপু বিশ্বাস, বাসদ নেতা সুভাংশু চক্রবর্তী, গণমুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন নসু, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সমন্বয়ক মাসুদ খান, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী প্রমুখ। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ হলে বাংলাদেশ বিপন্ন হবে। সরকার যদি রামপালে বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করে তাহলে সেখানকার হাজার হাজার মানুষ উচ্ছেদ হবে। সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে সেটি পুরোপুরি পুঁজিবাদী উন্নয়ন। যেখানে শুধুমাত্র একভাগ মানুষের উপকার হবে কিন্তু ৯৯ ভাগ মানুষ বঞ্চিত হবে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আজকে যদি বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকত তাহলে সরকার তাত্ক্ষণিকভাবে জনগণের বিরোধিতা আমলে নিয়ে এ প্রকল্প বন্ধ করে দিত। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা গণভোট দিয়ে দেখুন দেশের কত শতাংশ মানুষ রামপালে বিদ্যুেকন্দ্র চায় আর কত শতাংশ চায় না। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির মহাসড়কে প্রকৃতি এবং দেশকে ধ্বংস করার পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। আইয়ুব খানের মতো মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে ডিজিটাল গণতন্ত্র চালু করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের পাপের বোঝা অনেক বড় হয়েছে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকার যদি রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে তাহলে এই আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হবে। আর সেই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় যাব। এ জন্য সব বামশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, সুন্দরবন বাঁচানোর জনগণের এই আন্দোলন কখনো বৃথা হতে পারে না। এই মহাসমাবেশের পরেও যদি সরকারের টনক না নড়ে তাহলে ভবিষ্যতে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনের ডাক দেব। সাইফুল হক বলেন, বিনা ভোটের সরকার বিদেশিদের খুশি করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। আমাদের এই আন্দোলন শুধু সুন্দরবন রক্ষার নয় বরং বাংলাদেশকে রক্ষার। জোনায়েদ সাকী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, সময় থাকতে জনগণের কথা শুনুন। তা না হলে জনতার এই স্রোত আপনার গদি ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের প্রতি এবং জনগণের প্রতি সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সরকারের মধ্যে আমরা ভারতপন্থি, চিনপন্থি, রুশপন্থি, মার্কিনপন্থি খুঁজে পেলেও বাংলাদেশপন্থি খুঁজে পাই না। তিনি বলেন, এই আন্দোলন আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার, তাই যে কোনো মূল্যে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সমাবেশে উত্থাপিত সাত দফা দাবির মধ্যে আরও আছে— সৌরবিদ্যু?ৎ উৎসকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূলধারায় আনা, সাগর ও স্থলভাগের গ্যাস সম্পদ দেশের সর্বত্র গ্যাস সংযোগ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নে কাজে লাগানো, দায়মুক্তি আইন বাতিল ও খনিজ সম্পদ রপ্তানি নিষিদ্ধকরণ আইন পাস।