শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

গ্রামের নাম আলপনা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

গ্রামের নাম আলপনা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউপির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রামের নাম টিকইল। এই গ্রামটি এখন সারা দেশে আলপনা গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে চলেছে। আর আলপনার মূল কারিগর হচ্ছেন প্রতিটি পরিবারের গৃহিণীরা। তারা বংশ পরম্পরাই এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। টিকইল গ্রামের গৃহিণীরা জানান, পুরুষরা কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকে। আর নারীরা বংশ-পরম্পরায় বাড়ির দেয়ালে আলপনা এঁকে সূচি-শুভ্রতা, সৌন্দর্যবর্ধন ও দেবতার সুদৃষ্টি ও আশীর্বাদ কামনা করে থাকে। হিন্দুপাড়া টিকইলের শ্রী সুকুমার বর্মণের স্ত্রী শ্রীমতি নয়ন মণী বর্মণ (৩২), দাসু বর্মণের স্ত্রী দেখান বালা বর্মণ (৪৫), রঞ্জিত বর্মণের স্ত্রী অনিতা বর্মণ (৩১) ও সুনীল বর্মণের স্ত্রী বন্দনা বর্মণ (৩৩)সহ অনেকেই তাদের মাটির বসতঘর, বৈঠক ঘর ও রান্নাঘরের ভিতরের-বাইরের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের ফুল, পশু-পাখি, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ এমনকি বিভিন্ন দেব-দেবীর ছবি এবং হিন্দুধর্মীয় শ্লোক আঁকতে ব্যস্ত থাকেন। গৃহিণীরা জানান, আগে আলপনা আঁকতে গিরিমাটি, চক (খড়িমাটি), রং, তারপিন তেল ব্যবহার হতো। তবে ওইসব উপকরণে আঁকা আলপনা বেশিদিন স্থায়ী হতো না। তাই বর্তমানে শুকনা বরই চুর্ণ আঠা, গিরিমাটি, আমের পুরাতন আঁটির শাঁস চুর্ণ, চকগুঁড়া, বিভিন্ন রং, মানকচু ও কলাগাছের কস দিয়ে তৈরি রংয়ের মিশ্রণ অন্তত ৪/৫ দিন ভিজিয়ে রেখে আলপনা আঁকা হয়। ফলে ওই আলপনা প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। টিকইল গ্রামের মৃত নরেশের স্ত্রী প্রভাতী বালা (৬৩) এখনো নিজ হাতে মনের মাধুরী মিশিয়ে ধর্মীয় শ্লোক ও আলপনা আঁকেন। তিনি বলেন, এতে যেমন বাড়িঘরে পবিত্রতা আসে ঠিক তেমনি পরিবারের সবার মনে বাড়িঘরে আনন্দ লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি আরও জানান, আগে বাড়িঘরের আলপনার মাধুর্য দেখে ওই বাড়ির বর-কনে পছন্দ করতেন বুড়া-বুড়িরা। আর হিন্দুপাড়ার টিকইল গ্রামের নারীরা (গৃহিণীরা) আজও আলপনা আঁকার চর্চাটি ধরে রেখেছেন। আগামী প্রজন্মেও এর ধারা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর