বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বোমা মেশিনে লুট তিস্তার পাথর-বালু

হুমকিতে গোটা সেচ প্রকল্প ও ব্যারাজ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বোমা মেশিনে লুট তিস্তার পাথর-বালু

তিস্তা ব্যারাজের উজান ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে প্রকাশ্যে লুট করা হচ্ছে পাথর-বালু —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের উজান-ভাটিতে তিন শতাধিক বোমা মেশিন স্থাপন করে প্রকাশ্যে লুট করা হচ্ছে পাথর ও বালু। এতে হুমকিতে পড়েছে গোটা সেচ প্রকল্প ও ব্যারাজ।

সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যারাজের উজান ও ভাটির বিভিন্ন স্থানে এসব বোমা মেশিনে চলছে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। এসব পাথর ব্যারাজের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে স্তূপাকার করে রাখা হয়েছে এবং ট্রাক লাগিয়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ তত্পরতা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার সহযোগিতায় এ লুটপাটের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে পাথর উত্তোলনকারী ব্যবসায়ীদের একটি বড় সিন্ডিকেট। এদের বিরুদ্ধে কোনো শক্তিই সফল হতে পারছে না। ফলে ভ্রাম্যমাণ  আদালত পরিচালনা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সহযোগিতায় বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠায় স্থানীয় প্রশাসন অসহায় অবস্থায় পড়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, পাথর উত্তোলনকারী বোমা মেশিন বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কয়েকটি মেশিন উদ্ধার করলেও বন্ধ হচ্ছে না পাথর উত্তোলন। ওই সব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পৌঁছার আগেই পালিয়ে যায় পাথর ব্যবসায়ীরা। ফলে স্থানীয় প্রশাসন অনেক চেষ্টার পরও বন্ধ করতে পারছে না পাথর উত্তোলন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাথর ব্যবসায়ী জানান, এ পাথরের টাকার একটা নির্দিষ্ট অংশ ‘বড় ভাইয়ের’ হাতে দিতে হয়। তিনিই প্রশাসনকে ম্যানেজ করেন। ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা পুলিশ এলে প্রশাসনের লোকেরাই ফোন করে আগাম খবরটি জানিয়ে দেয়। তখন কিছু সময়ের জন্য মেশিন সরিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুল হক ‘পাথর ও বালু তোলার কারণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ হুমকির মুখে পড়তে পারে’ এ কথা অকপটে স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে পাথর উত্তোলনকে সাধুবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ পাথর তোলার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হবে। এতে উজান ও ভাটিতে বসবাসরত জনবসতি বন্যাকবলিত হবে না।’

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবীর জানান, রাজনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি একাধিকবার বোমা মেশিন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা না পাওয়ায় পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এ পাথর উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন তিস্তা ব্যারাজের একাংশ ধসে যাবে। হুমকির মুখে পড়বে ব্যারাজের সুবিধাভোগী কয়েক লাখ কৃষকের ভবিষ্যৎ।’ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘শুনেছি ব্যারাজের দুই পাশ থেকে কয়েকশ মেশিনে তোলা হচ্ছে পাথর। এটা বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদী থেকে বালু বা পাথর উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই।’

সর্বশেষ খবর